ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

যাকাত বন্টনের নীতিমালা ও না দেওয়ার পরিণতি

প্রকাশিত: ২১:০২, ১৪ মার্চ ২০২৫

যাকাত বন্টনের নীতিমালা ও না দেওয়ার পরিণতি

ইসলামের অন্যতম রুকন যাকাত, যা হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে ফরজ হয়েছে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনা রাষ্ট্রে যাকাত ব্যবস্থা কার্যকর করে দারিদ্র্য দূর করেছিলেন। যাকাতের মাধ্যমে ধনী সমাজের অর্থ গরীবদের মাঝে বণ্টিত হয় এবং অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।

যাকাত বণ্টনের নীতিমালা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা তওবার মধ্যে যাকাত প্রদানের আটটি খাত নির্ধারণ করেছেন:

১. ফকির: যাদের ন্যূনতম সম্পদ নেই এবং দিন আনে দিন খায়।
২. মিসকিন: যারা কিছু সঞ্চয় করতে পারে, তবে নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
৩. যাকাত আদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী।
৪. যারা ইসলামের পথে নতুন প্রবেশ করেছে।
৫. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যাদের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নেই।
৬. মুসাফির, যারা ভ্রমণরত অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়েছে।
৭. আল্লাহর পথে ব্যয় করা, যেমন দ্বীনি শিক্ষার জন্য অর্থ সহায়তা।
৮. ক্রীতদাস মুক্ত করার জন্য অর্থ প্রদান।

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ব্যবসার কারণে ঋণগ্রস্ত হয় এবং তার সম্পদ না থাকে, তবে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে পূর্বের ঋণকে সরাসরি যাকাত হিসাবে সমন্বয় করা যাবে না। যাকাতের টাকা তার হাতে তুলে দিতে হবে, এরপর সে তার ইচ্ছামতো তা ব্যবহারের অধিকারী হবে।

নিকট আত্মীয়দের ক্ষেত্রে, যদি তাদের খরচ চালানোর দায়িত্ব যাকাতদাতার উপর থাকে, তবে তাদের যাকাত দেওয়া যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, বাবা-মা, সন্তান ও স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া নিষিদ্ধ। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোন যদি আর্থিক সংকটে থাকে, তবে তাদের যাকাত দেওয়া যাবে।

স্বর্ণ-রূপার যাকাত

স্বর্ণ ও রূপার উপর নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়। নেসাবের পরিমাণ:

সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা

সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা

উক্ত পরিমাণের সমমূল্যের নগদ অর্থ।

যদি কারো কিছু স্বর্ণ ও নগদ অর্থ থাকে, তবে উভয়ের মূল্য মিলিয়ে রূপার নেসাব পরিমাণ অতিক্রম করলে যাকাত ফরজ হবে। ব্যবহৃত অলংকারের ক্ষেত্রেও অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যাকাত ফরজ বলে মত দেন।

শেয়ার, প্রাইস বন্ড ও পিএফ ফান্ডের যাকাত

শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষেত্রে, বাজারমূল্য হিসাব করে এক বছর পূর্ণ হলে তার উপর যাকাত দিতে হবে। যাকাত নির্ধারিত দিনে হিসাব করা জরুরি, যেমন কেউ যদি রমজানের ১০ তারিখ যাকাত দেয়, তবে ঐদিনের শেয়ারের বাজারমূল্য অনুযায়ী যাকাত নির্ধারণ করতে হবে।

যাকাত না দেওয়ার পরিণতি

যারা যাকাত প্রদান করে না, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কঠোর শাস্তির কথা হাদিস ও কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যারা সম্পদ জমা করে কিন্তু দান করে না, কেয়ামতের দিন তাদের গলায় সেই সম্পদ পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাকাত না দেওয়া সম্পদ সাপে পরিণত হয়ে মালিকের গলায় পেঁচিয়ে যাবে এবং তাকে দংশন করবে।

হাশরের ময়দানে যাকাত না দেওয়ার শাস্তি তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হবে। ইসলামী রাষ্ট্রে কেউ যদি যাকাত না দেয়, তবে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যেমনটি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) করেছিলেন।

যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, বরকত বৃদ্ধি করে এবং দারিদ্র্য দূর করে। এটি শুধু দানের বিষয় নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম। সঠিকভাবে হিসাব করে যাকাত প্রদান করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভ করা সম্ভব। ইনশাআল্লাহ, আমাদের সকলের উচিত যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করা।

সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=ZdT5J5kZIVk

রাজু

×