ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

মহানবীর (সাঃ) হাদিসে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া স্ত্রীর জন্য যে হুঁশিয়ারি রয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ১৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১০:৪৬, ১৩ মার্চ ২০২৫

মহানবীর (সাঃ) হাদিসে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া স্ত্রীর জন্য যে হুঁশিয়ারি রয়েছে

ইসলামে সুখী সংসার গঠনে পুরুষদের উপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তবে, এর পাশাপাশি স্ত্রীরাও তাদের কর্তব্য পালন করতে বাধ্য। মহানবী (সাঃ) তার হাদিসে স্ত্রীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়ন ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বামীকে রাগান্বিত না করার নির্দেশনা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রাগান্বিত হবে না। কেননা, যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তবে তার এমন গুণও থাকতে পারে, যার মাধ্যমে সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৪৬৯)। অর্থাৎ, স্ত্রী কখনো তার স্বামীকে কষ্ট দেবে না বা এমন কোনো আচরণ করবে না যা তার স্বামীকে ক্ষুব্ধ করে। স্বামীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তার গুণাবলী ও অসীম সহানুভূতির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

স্বামীর প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব

ইসলাম স্ত্রীর কাছে স্বামীর আনুগত্যকে অপরিহার্য মনে করে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘স্বামী যখন তার প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আগমন করে, যদিও সে চুলার ওপর ব্যস্ত থাকে।’ (তিরমিজি)। অন্য একটি হাদিসে মহানবী (সাঃ) আরো বলেছেন, ‘যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার শয্যায় ডাকে এবং স্ত্রী যদি স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দেয়, তবে জান্নাতের বাসিন্দারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।’ (বুখারি)। এই হাদিসগুলোতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে।

অন্যায়ভাবে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া

রাসূল (সাঃ) অন্যায়ভাবে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি মন্দ প্রতিবেশী থেকে, এমন স্ত্রীর থেকে, যে আমাকে বৃদ্ধ করে দেয়; এমন পুত্র থেকে, যে আমাকে মনিবের মতো শাসন করে; এমন সম্পদ থেকে, যা আমার শাস্তির কারণ হয়।’ (তাবারানি)। এখানে আল্লাহর কাছে সেই স্ত্রীর হাত থেকে নিরাপত্তা চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যারা স্বামীর প্রতি অন্যায় আচরণ করে।

স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ করা থেকে বিরত থাকা

অনেক সময় কিছু নারী স্বামীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বা রাগানোর জন্য তাদের অপছন্দনীয় কাজ করেন। মহানবী (সাঃ) এই ধরনের আচরণ থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান অতিক্রম করে না।’ অর্থাৎ যারা স্বামীকে কষ্ট দেয়, তাদের নামাজের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার মেরাজ থেকে ফিরে এসে বলেন, ‘আমি জাহান্নাম কয়েকবার দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো ভয়ানক দৃশ্য আর কোনো দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি ছিল।’ (মুসলিম)। যখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন তারা এমনভাবে পরিত্রাণ পায় না, তিনি বলেন, ‘এরা তাদের স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, আল্লাহর নয়।’ এর মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) একথা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা রাখাই একজন স্ত্রীর কর্তব্য।

স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন

মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী এমনভাবে মারা যায় যে তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)। এর মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সম্মান ও সদ্ভাব বজায় রাখা এবং স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কথা বলা হয়েছে।

সংক্ষেপে, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্য, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি পারস্পরিক সহানুভূতি সংসারের শান্তি ও সুখ নিশ্চিত করে।

রাজু

×