
ছবি: সংগৃহীত
রমজান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সাদাকাতুল ফিতর, যা সংক্ষেপে ফেতরা নামে পরিচিত। এটি মূলত রোজা রাখার শুদ্ধি এবং সমাজের গরিব-দুঃখীদের সহায়তার একটি মাধ্যম। ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, ঈদুল ফিতরের আগেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানকে এই দান আদায় করতে হয়।
ফেতরার অর্থ ও মৌলিক ধারণা
ফেতরা একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা। ইসলামে এটি সদকায়ে ফিতর নামে পরিচিত, যা রমজানের শেষে ঈদের আগে নির্দিষ্ট গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। মূলত এটি রোজার আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দান।
ফেতরা আদায়ের ইসলামী বিধান
ফেতরা প্রদান করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
"রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকায়ে ফিতরকে ওয়াজিব করেছেন যেন এটি রোজাদারের জন্য অপ্রীতিকর বা অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজের গুনাহের কাফফারা হয় এবং গরিবদের জন্য খাবারের সংস্থান হয়।" (সুনানে আবু দাউদ)
ফেতরার তাৎপর্য ও উপকারিতা
১. সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা: ফেতরা প্রদান ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে।
2. রোজার শুদ্ধি: রমজানে অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি এবং ক্ষুদ্র পাপের কাফফারা হিসেবে কাজ করে।
3. গরিবদের সহায়তা: ঈদের দিনে যেন সবাই আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে, তা নিশ্চিত করে।
4. মানবিক দায়বদ্ধতা: এটি দানশীলতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়।
ফেতরার পরিমাণ ও আদায়ের নিয়ম
ফেতরার নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ভর করে খাদ্যশস্যের উপর। হাদিস অনুযায়ী, এটি এক সা' (প্রায় ৩.২৫ কেজি) খাদ্যশস্য বা এর সমমূল্যের টাকা দিয়ে আদায় করা যায়।
বাংলাদেশে ফেতরার হার: প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্ধারিত হার প্রকাশ করে, যা সাধারণত চাল, আটা, খেজুর বা এর সমমূল্যের অর্থে প্রদান করা যায়। এবার টাকার অংকে সর্বনিম্ন ১১০ ও সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা নির্ধারন হয়েছে ফেতরা।
ফেতরা কাদের দেওয়া যাবে?
১. গরিব ও দুঃস্থ মানুষ
২. মিসকিন (অত্যন্ত অভাবী)
৩. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
৪. মুসাফির (ভ্রমণরত ব্যক্তি, যার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই)
ফেতরা শুধুমাত্র একটি দান নয়, এটি ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচারের অংশ। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহমর্মিতা বাড়ায় এবং ঈদের আনন্দকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত যথাযথভাবে ও সময়মতো ফেতরা আদায় করা, যাতে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি ঈদের খুশিতে শরিক হতে পারে
কানন