
ছবি: সংগৃহীত
রমজান শুধু আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাস নয়, এটি শরীর ও মনের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। উপবাস বা রোজার সময়কাল জুড়ে দেহ ও মন এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যা স্বাস্থ্য ও মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোও এই বিষয়টি তুলে ধরছে।
রোজার শারীরিক উপকারিতা
গবেষকদের মতে, রোজা আমাদের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে এবং দেহের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। রোজার সময় খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় থাকায় হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। এছাড়া, রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত উপবাস দেহের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যের গতি ধীর করে। অন্যদিকে, হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষণায় বলা হয়েছে, রোজা কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যকারিতা বাড়ায়, যা শক্তি উৎপাদন এবং টক্সিন মুক্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
শুধু শারীরিক নয়, রোজা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, উপবাস ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত ও প্রশান্ত রাখে।
এছাড়া, নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অভ্যাস মনকে স্থির ও সুসংগঠিত রাখতে সাহায্য করে। ফলে দুশ্চিন্তা ও অবসাদ কমে যায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে। গবেষকরা আরও বলছেন, রমজানে প্রার্থনা ও ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, যা সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে।
রোজার বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা উপবাস বা ফাস্টিং-এর উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বর্তমানে বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা রোজার সাথে মিল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়মিত উপবাস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং অ্যালঝাইমার ও পারকিনসনের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
রমজান শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে রোজা রাখলে এটি শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি জীবনযাপনের শৃঙ্খলাবোধও বাড়ায়। তাই আধুনিক বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয় ক্ষেত্র থেকেই রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম।
আসিফ