
ছবি : সংগৃহীত
বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐকমত্য পোষণ করুন, আমরাই আপনাদের নির্বাচন করার ব্যবস্থা করে দেব।
সোমবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এনসিপির আয়োজনে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠন (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে, সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফয়সালা কি হবে। আমরা মনে করি, ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি, এই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর কোন জায়গা হবে না, হবে না, হবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা বলবো যে, আমাদেরকে বলা হচ্ছে যে, আমরা নাকি নির্বাচন পিছনের রাজনীতি করছি। খুব পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই, পাল্টা কথা আপনাদেরকে বলতে চাই যে, আপনারা বিচার ও সংস্কার পিছানোর রাজনীতি করবেন না। বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐক্যমত পোষণ করুন। নির্বাচন আমরা আপনাদেরকে করে দিতে সহায়তা করব।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “ফলে সরকারকে বলবো দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। কতদিনের মধ্যে, কোন প্রক্রিয়ায়, আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে পারবো এবং দৃশ্যমান সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো, সেটা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।
এবং আমি বলব যে, এই বাংলাদেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, তাকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়ে, আহ্বান জানিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলাম। অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দ রয়েছেন, সেনাপ্রধান রয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই কিন্তু কমিটমেন্ট দিয়েছিলেন যে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব তারা নিচ্ছেন। ফলে এই কমিটমেন্ট থেকে কিন্তু তারা দূরে সরে যেতে পারবেন না। জনগণের সামনে কিন্তু তাদেরকে দাঁড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “ফলে আমরা কিন্তু কড়ায়-গন্ডায় জবাবদিহিতা নিব। যে আমাদের বিচার কতটুক আদায় হলো। আমাদের সংস্কার কতটুকু আদায় হলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এতই তাড়াহুড়া করে, ভোট যেতে গেলে কিন্তু সেই জবাবদিহিতা তাদেরকে দিতে হবে।
ফলে আমি বলব যে, বাংলাদেশে যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমরা সেই ঐক্যমত ধরে রাখতে চাই। আমরা কেউই নির্বাচনের বিরুদ্ধে না, বরং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলে আমরা নিজেরাও একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। কিন্তু আমরা বলছি যে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন, এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, গণপরিষদ নির্বাচন। কারণ এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এই সংবিধান, এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান অকার্যকর হয়েছে, ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।”
এনসিপ’র প্রধান নাহিদ বলেন, “ফলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে একটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে নতুন একটি সংবিধান, এই জাতিকে আমরা উপহার দিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। আমি রাজপথে এসেছি, আপনাদের কাতারে, আপনাদের কথা শোনার জন্য, আপনাদের দাবিগুলো আদায় করার জন্য। আমাদের দেখা হবে, কথা হবে, আর আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করব। আমরা কেউ নিজেরা আইন হাতে তুলে নিব না।”
তিনি বলেন, “কোন ধরনের মব তৈরির যে রাজনীতি, যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশকে, আমাদের ধর্ম ইসলামকে, নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, অনেক গ্রুপ করছে। আমরা সেগুলো প্রতিহত করব এবং আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের যে দাবি, বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান, সেটি আদায়ে খুব দ্রুতই আমরা রাজপথে নামবো।”
মো. মহিউদ্দিন