
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ মাদরাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ভাইস-প্রিন্সিপাল ড. মো. নুরুল্লা মাদানী বলেন, আদর্শ সমাজ বলতে আমরা বুঝি যাকে অনুসরণ বা অনুকরণ করা যায়। রমজান সংযম ও সাধনার মাস। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যমে মুমিনের জীবনে যে পরিশুদ্ধি আসে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে পুরো সমাজে।
তাই আদর্শ সমাজ গঠনে রমজানের ভূমিকা ও অবদান অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
কোয়ালিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. আব্দুল্লাহ আল মিজান বলেন, রমজানে যাকাতের মাধ্যমে গরীবদের অনেকটা বড় অংশ স্বাবলম্বী হয়। তাহলে ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী রমজানে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায় হয়। যা সঠিক ভাবে ব্যবহার করার ফলে সমাজে কিন্তু বেকারত্ব দুর হয়।
আল্লাহভীতি : আদর্শ মানুষ ও সমাজ গঠনের অন্যতম প্রধান নিয়ামক তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতি মানুষকে অন্যায় কাজ পরিহার এবং আল্লাহর আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করে। রমজান আল্লাহভীতি অর্জনের মাস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
পাপ পরিহার : পাপ ও পাপাচার থেকে ফিরে আসা রমজানের অন্যতম প্রধান দাবি। পাপ পরিহারের মাধ্যমেই ব্যক্তির সিয়াম সাধনা পূর্ণতা পায়। এ জন্য মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
সাম্য ও সহমর্মিতা : রোজা রাখার মাধ্যমে মুমিন অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। ফলে তার ভেতর সাম্য ও সহমর্মিতার চিন্তা জাগ্রত হয়। সে অন্যের কষ্ট ভাগ করে নেয়। সাম্য ও সহমর্মিতার চিন্তা জাগ্রত করতে ইসলাম রমজানে বেশি বেশি দান করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল। রমজানে যখন জিবরাইল তাঁর সঙ্গে দেখা করত তখন তাঁর দানশীলতা আরো বেড়ে যেত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬)
সহনশীলতা : রমজান মুমিনকে সহনশীল হতে শেখায়। ফলে সে অন্যের অন্যায় ও অবিচার উপেক্ষা করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রোজা পালন করে, তখন সে যেন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার না করে এবং উচ্চৈঃস্বরে কথা না বলে ও কারো ওপর রাগান্বিত না হয়। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে, তখন সে যেন বলে, আমি রোজা পালন করছি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২১৭)
অন্যায় থেকে আত্মরক্ষা : রোজা শুধু অন্যের প্রতি সহনশীল হতে শেখায় না, বরং অন্যদের অন্যায় থেকে আত্মরক্ষারও উপায়। মারিয়াম (আ.)-কে সমাজের কুৎসিত প্রশ্ন ও অন্যায় আচরণ থেকে বাঁচতে বলা হয়েছিল, ‘মানুষের মধ্যে কারো যদি তুমি দেখো তখন বোলো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশে রোজা তথা মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৬)
পবিত্রতা লাভের অনুপ্রেরণা : রোজা মানুষকে পাপমুক্ত পবিত্র জীবনের অনুপ্রেরণা জোগায়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস রেখে সওয়াবের নিয়তের রমজানে রাত জাগরণ করে (তারাবি ও তাহাজ্জুদ) আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব পাপ মার্জনা করে দেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২০২)
সামাজিক সম্প্রীতি : রোজা মানুষের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে। তাই সমাজে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তৈরি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান ধৈর্যের মাস। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালনে অন্তরের ক্রোধ ও বিদ্বেষ দূর হয়।’ (মুসনাদে আহমদ)
ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা : রোজা পালনের মাধ্যমে বান্দা ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিতনায় পতিত হয়; নামাজ, রোজা, দান, (ন্যায়ের) আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৫)।
শহীদ