
ছবি: সংগৃহীত
মাহে রমজান নিজেকে নিজেকে বদলে ফেলার মাস। উত্তম চরিত্র গঠনের মাস। এ সময় আমাদের সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোনো দিন সিয়াম অবস্থায় ভোরে উপনীত হয়, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা ও জাহিলি আচরণ না করে। যদি কেউ তাকে গালাগাল করে বা তার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে উদ্যত হয়, তখন সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী, আমি সিয়াম পালনকারী। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৩)। কোরআন ও হাদিসে মানুষের সব ধরনের মন্দ স্বভাব পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেমন কয়েকটি মন্দ স্বভাব হলো—
ক্রোধ ও রাগ : অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের হিতাহিত জ্ঞান কেড়ে নেয় এবং অন্যায় কাজে উদ্বুদ্ব করে। ফলে পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিকে লজ্জিত হতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা ক্রোধান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। ’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৩৭)।
মিথ্যাচার : মিথ্যাচার জঘন্যতম পাপ। কথাবার্তা, কাজকর্ম ও আইন-আদালত—সর্বত্র মিথ্যা পরিহার করে চলতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মিথ্যাকে শিরকের পরে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা বর্জন করো মূর্তিপূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাকো মিথ্যা কথন থেকে। ’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩০)
হিংসা-বিদ্বেষ : ইসলামের দৃষ্টিতে হিংসা একটি মানসিক ব্যাধি, যা মানুষের মানসিক স্বস্তি ও শান্তি নষ্ট করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্টের কারণ হয়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৩)
অহংকার : অহংকার বা আত্মম্ভরিতা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম স্বভাব। আল্লাহ অহংকার অপছন্দ করেন এবং তা মানুষের পতন ডেকে আনে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো উদ্ধত-অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৮)। পরকালেও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি হবে ভয়াবহ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে এক অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১)
দুনিয়ার মোহ : পার্থিব জীবন ও জীবনোপকরণের চাহিদা মানুষকে পাপকাজের প্রতি ধাবিত করে। মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও পরকালীন চিন্তা থেকে বিমুখ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসল সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। আর যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভালোবাসল সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর স্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দেবে। ’ (মুসনাদে আহমদ : ৪/৪১২)।
কৃপণতা : কৃপণতা আল্লাহর অপছন্দনীয় একটি স্বভাব। যা খিয়ানত, বিশ্বাসঘাতকতা ও নির্দয়তার মতো মন্দ স্বভাবের সৃষ্টি হয় কৃপণতা থেকে। এর কারণে মানুষের সামাজিক সম্মানও ক্ষুণ্ন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য তা মঙ্গল—এটা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে; বরং এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে বিষয়ে তারা কৃপণতা করবে কিয়ামতের দিন তা তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)।
অপব্যয় ও অপচয় : ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃপণতা যেমন দোষণীয়, অনুরূপ অপব্যয় এবং অপচয় দোষণীয়। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কাজেও অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
গালি দেওয়া : গালি দেওয়া এবং অশ্লীল ও অকথ্য ভাষা ব্যবহার করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের সঙ্গে লড়াই করা কুফরি এবং তাকে গালি দেওয়া ফিসক (প্রকাশ্য পাপ)। ’ (নাসাঈ, হাদিস : ৪১১৩)। রোজাদারের জিহ্বা রোজা রাখে পরচর্চা বা গিবত থেকে, চোগলখোরি থেকে, অশ্লীল ও মিথ্যা কথা থেকে। দূরে থাকে মূর্খামি ও বেয়াকুফি করা থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করল না, আল্লাহ তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)।
শহীদ