
ছবি: সংগৃহীত
পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। শুধু তাই নয়, মহাবিশ্বের প্রাণবন্ত সবকিছুর সূচনাও এই পানি থেকেই। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এ মহাবিশ্বে পানির উৎপত্তি কবে এবং কীভাবে ঘটেছিল? বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা বহু আগে পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পর সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় মহাবিশ্বে প্রথম পানি তৈরি হয়েছিল। গবেষকদের মতে, বিগ ব্যাং থেকে প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমদিকে এটি ছিল একটি অতি ক্ষুদ্র, প্রচণ্ড উত্তপ্ত ও ঘন বিন্দু, যা হঠাৎ এক বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মহাবিশ্ব দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে এবং ক্রমে ঠান্ডা হতে শুরু করে। সেই সময় বিভিন্ন মৌলিক কণা পারস্পরিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পদার্থ তৈরি করে, যার মধ্যে ছিল গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সিগুলো।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, যা পরে হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে পানি গঠনের পথ তৈরি করে। গবেষণাগারে কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্র ধ্বংসের পর যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার পরপরই পানি সৃষ্টি হতে শুরু করে। সেই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন শীতল হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি তৈরি করে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আধুনিক বিজ্ঞানীরা যখন এ তথ্য আবিষ্কার করলেন, তখনই জানা যায় যে, পবিত্র কোরআনে এ সংক্রান্ত একটি তথ্য দেড় হাজার বছর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে:
“কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মুখবন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।”
বিজ্ঞান ও ধর্মের এই তথ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিল দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমে মহাবিশ্ব একটি বিন্দুতে সীমাবদ্ধ ছিল, যা বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল, পরে পানি সৃষ্টি হয়েছে এবং তারপর প্রাণের বিকাশ ঘটেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, পানি রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে তৈরি। বিগ ব্যাংয়ের কয়েক মিনিট পর মহাবিশ্বে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কণা সমুদ্র ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং পরমাণু গঠিত হয়। প্রথমদিকে কেবল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছিল, তবে সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে ভারী মৌল যেমন অক্সিজেন তৈরি হয়। এরপর যখন তাপমাত্রা ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তখন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে পানির অণু তৈরি হয়।
এই দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি মহাবিশ্বে প্রথম তৈরি হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে গ্রহ-উপগ্রহ, বিশেষ করে পৃথিবীতে পানি ও প্রাণের বিকাশের পথ তৈরি করে। তাহলে কি এই মহাজাগতিক ঘটনা নিছকই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, নাকি এর পেছনে কোনো মহান স্রষ্টার পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে? এ নিয়ে ভাবার বিষয় রয়েছে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/rEJ8X0k7L5Y?si=9O96gR7RZk97M13V
এম.কে.