
ছবি: প্রতীকী
অনেকেই জানেন না, কখনও কখনও রোজা রাখার পরও কিছু বিষয় ঘটে, যার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজা ভঙ্গের কারণ মনে করেন। ফলে এমন কোনো কাজ হয়ে গেলে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করেন। অন্যদিকে কেউ কেউ এসব কাজ পরিহার করতে গিয়ে অযথা কষ্ট ভোগ করেন। সুতরাং এসব বিষয়েও সকল রোজাদারের জানা থাকা দরকার।
রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে: কোন ব্যক্তি যদি রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে। তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে রোজার কথা মনে হওয়ার সাথে সাথে তাকে অবশ্যেই পানাহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদিস শরীফে আছে, যে ব্যাক্তি ভূলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কারণ, আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫৫।
চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করলে: চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। হযরত আনাস (রা) রোজা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। সুনানে আবু দাউদ ১/৩২৩।
সেহরীর আগে স্ত্রী সহবাস করলে: রাতের স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদুষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল না করতে পারলেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না। তবে রোজা অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে গোসল না করে থাকা অনুচিত। আয়েশা সিদ্দীকা (রা:) ও উম্মে সালামা (রা) থেকৈ বর্ণিত, গোসল ফরয অবস্থায় নবী কারীম (সা:) এর ফজর হত। অতএব তিনি গোসল করে রোজা পূর্ণ করতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৬।
বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসের আশঙ্কা: বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসের আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েজ। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে; তাই তাদের সাবধান থাকা উচিত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, আমরা নবী কারীম (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। এমন সময় একজন যুবক এসে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীকে চুম্বন করতে পারি? নবী (সাঃ) বললেন, না!
অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি: অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলেও রোজা ভাঙবেনা। তেমনি বমি মুখে এসে আবার নিজে নিজে ভিতরে চলে গেলে রোজা ভাঙবেনা। হাদিসে বর্ণিত, অনিচ্ছাকৃত কোন ব্যক্তির বমি হলে তার রোজা কাজা হবে না; জামে তিরমিজি ১/১৫৩ হাদীস ৭২০।
শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে: রোজা অবস্থায় শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা কাজা হবে না। কাতাদাহ (রাহঃ) বলেন, রোজাদারের তেল ব্যবহার করা উচিত, যাতে রোজার কারণে সৃষ্ট ফ্যাকাশে বর্ণ দুর হয়ে যায়। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৪/৩১৩।
যৌন চিন্তা নিয়ে কোন নারীর দিকে তাকালে: যৌন বা কামভাব নিয়ে কোন নারীর দিকে তাকালে কোন রকম যৌন কর্ম ছাড়াই যদি বীর্যপাত হয়। তাহলে রোজা ভাঙবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য রোজা অবস্থায় সব ধরণের কু-চিন্তা করা অনুচিত। জাবির ইবনে যায়েদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর দিকে কামভাবের সাথে তাকানোর ফলে বীর্যপাত ঘটেছে, তার রোজা কি ভেঙ্গে গেছে? তিনি বলেন, না! সে রোজা পূর্ণ করবে।
পেটে মশা ও মাছি ঢুকে গেলে: মশা, মাছি ও কীটপতঙ্গ অনিচ্ছকৃত পেটের ভিতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবেনা। একইভাবে ধোঁয়া বা ধুলাবালী অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/৩৪৯।
স্বপ্নদুষ হলে: কারো স্বপ্নদুষ হলে রোজা ভাঙবেনা। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সাঃ) এর একবার মুখ ভরে বমি হল। তিনি তখন বললেন, তিন বস্তু রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।
চোখের পানি মুখে গেলে: চোখের পানি মুখে গেলে রোজা ভাঙবেনা। তবে তা যদি গলার ভিতর চলে যায়। তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩।
অজ্ঞান হয়ে গেলে: সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর কেউ যদি অজ্ঞান হয়ে যায়। তাহলে তার রোজা ভাঙবেনা। নাফে (রাহঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) একদিন নফল রোজা অবস্থায় বেহুঁস হয়ে যান, কিন্তু এ কারণে তিনি রোজা ভাঙেননি।
শহীদ