ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

পৃথিবীর যে ৪ নদী সরাসরি জান্নাত থেকে এসেছে

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৬ মার্চ ২০২৫

পৃথিবীর যে ৪ নদী সরাসরি জান্নাত থেকে এসেছে

ছবি: সংগৃহীত।

আল্লাহ তার অতুলনীয় সৃষ্টিকুশলতায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে এমনও কিছু বিশ্বয়কর সৃষ্টি রয়েছে যা মানুষকে অবাক করে দেয়। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় স্থান পেয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ও বৈচিত্র। মহান রাব্বুল আলামীনের এই অপূর্ব সৃষ্টিসমূহের মধ্যে অন্যতম নদী। তবে এমনও কিছু নদী রয়েছে যার উৎপত্তি স্বয়ং জান্নাতে এবং তা পৃথিবীতে প্রবাহিত হচ্ছে।

পৃথিবীতে প্রবাহিত কিছু নদীর সঙ্গে ইসলাম ধর্মের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সহি মুসলিমের হাদিসে উল্লেখিত চারটি নদী জান্নাতের সাথে সম্পৃক্ত বলে বর্ণিত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন চারটি নদী প্রবাহিত হয়েছে যেগুলো জান্নাতের নদীগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এই নদীগুলো শুধু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তাদের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ইসলামের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

প্রথমে থাকছে ফোরাত নদী (ইউফ্রেটিয়াস রিভার)। এই নদীটি ২৮০০ কিলোমিটার লম্বা এবং তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে কেয়ামতের আগে শুকিয়ে যাবে এই ফোরাত নদী। ইতোমধ্যে এই নদী শুকানো শুরু হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদী শুকিয়ে যায় এবং তার মাঝ থেকে একটি স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচন হয়। মানুষ সে স্বর্ণের জন্য যুদ্ধ করবে এবং প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনই মারা যাবে। তারা প্রত্যেকেই ভাববে, হয়তো আমি সেই বেঁচে যাওয়া একজন হব।"

মিশরের নীলনদ: নীল নদে ইসলামের ঐতিহ্যের সাথে সবচেয়ে বিখ্যাত সংযোগ হলো নবী মুসা আলাইহিস সালামের গল্প। তার মা ফেরাউনের আদেশ থেকে তাকে রক্ষা করার আশায় একটি ঝুঁড়িতে রেখে নীল নদে ভাসিয়ে দেন, যা অবশেষে ফেরাউনের পরিবারের কাছেই পৌঁছে যায়। মুসার নবী হওয়ার যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই।

মহানবী (সাঃ) মেরাজে গিয়ে জান্নাতের চারটি নদী দেখেছেন, যার মধ্যে দুটি বাহ্যিক এবং দুটি অভ্যন্তরীণ নদী। বাহ্যিক নদী দুটি হলো দুনিয়ার প্রবাহমান নীলফোরাত

তুরস্কের জয়হান নদী: সহি মুসলিমে জয়হান নদীকে জান্নাতের নদীগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি পূর্ব তারাস পর্বতমালার নূরহাক পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্য সাগরে গিয়ে মিশেছে। এটি প্রাচীনকাল থেকে একটি প্রাকৃতিক সীমানা ও বিভিন্ন সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে পরিচিত ছিল।

তুরস্কের সিহান নদী: সিলিসিয়া অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী, এটি প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্য সাগরে মিশেছে। প্রাচীন লেখকরা সিহান নদী সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছেন এবং এটি কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "সাইহান ও জয়হান, ফুরাত এবং নীল প্রত্যেকটি নদী জান্নাতের নদীগুলোর অন্যতম।"

জান্নাতের নদী "কাউসার": কাউসার, জান্নাতের অন্যতম নদী, যা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হজ রূপে দান করা হয়েছে। সেখান থেকে মহানবী তার উম্মতকে কেয়ামতে পানি পান করাবেন। এই পানির স্বাদ এমন হবে, যা দুধের চেয়েও সাদা, বরফের চেয়েও শীতল, মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও সুগম। একবার কেউ এই পানি পান করলে, তাকে আর কখনো পিপাসায় স্পর্শ করবে না।

এভাবে, পৃথিবীতে প্রবাহিত এই নদীগুলো শুধু ভৌগোলিক দিক থেকে নয়, আধ্যাত্মিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো জান্নাতের সুনির্দিষ্ট উপহার হিসেবে মানবজাতির জন্য একটি বিশেষ দান।

নুসরাত

×