
তারাবির নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। মসজিদে জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়া পুরুষের জন্য সুন্নত আর নারীরা ঘরে একাকী তারাবি পড়া উত্তম। অর্থাৎ নারীদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবি পড়া আবশ্যক নয়। বরং তারা ঘরে একা নামাজ পড়লে অধিক সওয়াব পাবেন।
আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ক্ষুদ্র কক্ষে নারীদের নামাজ বড় কামরার নামাজের তুলনায় উত্তম। ঘরের নির্জন কোণে নামাজ ক্ষুদ্র কক্ষের নামাজের তুলনায় উত্তম।’ (আবু দাউদ: ৫৭০ (হাদিসটি সহিহ)]
তবে পর্দা লঙ্ঘন না হলে, মসজিদে আসা যাওয়া এবং নামাজের পরিবেশ সবকিছু ফিতনামুক্ত ও নিরাপদ ব্যবস্থা থাকলে নারীরা মসজিদে তারাবি পড়তে পারবেন। যদিও আলেমরা এরপরও নারীদের ঘরে নামাজ পড়তেই উৎসাহিত করে থাকেন। এর কারণ হলো- বর্তমান সময়ে কোনো না কোনোভাবে ফিতনা প্রকাশ পেতে পারে কিংবা একপর্যায়ে পর্দার বিধান লঙ্ঘন কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এসব আশংকা থেকে মুহাক্কিক আলেমরা নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে বা মসজিদে গিয়ে নামাজে শরিক হতে নিরুৎসাহিত করেন।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নারীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা যদি রাসুল (স.) জানতেন, তবে বনি ইসরাইলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি তাদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি: ৮৬৯)
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরি ও আল্লামা হাসকাফি (রহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ফেতনার ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় ফতোয়া হলো—সব নারীর জন্যই সব নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি। (আল বাহরুর রায়েক: ১/৬২৭-৬২৮, আদ্দুররুল মুখতার: ১/৩৮০)
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জামানায় তাঁর স্ত্রীগণ একত্রিত হয়ে জামাতে নামাজ পড়ার প্রমাণ হাদিস শরিফে পাওয়া যায় না। আলী (রা.) বলেন, ‘কোনো নারী জামাতের ইমামতি করতে পারবে না।’ অনুরূপ তাবেয়ি ইবরাহিম নাখয়ি, ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ, রবিআ ও ইবনে শিহাব জুহরি (রহ.) প্রমুখ থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। (আলমুদাওয়ানাতুল কোবরা: ১/১৭৮) প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও ফিকাবিদ শিব্বির আহমদ উসমানি (রহ.) বলেন, হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। (ইলাউস সুনান: ৩/১৩০১)
হাফেজা নারীরা একাকী খতম তারাবি পড়তে পারেন। যদি কোথাও আটকে যান, নামাজশেষে দেখে নিয়ে সামনে অগ্রসর হবেন। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৯৮)
ঘরে নারীরা মিলে জামাত করা মাকরুহে তাহরিমি। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫/৩৬) যদিও নারীরা জামাতে তারাবি পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে, তবে সবাই গুনাহগার হবেন। তারপরও যদি নারীরা আলাদা জামাত করেন, তাহলে যিনি ইমাম হবেন তিনি কাতারে সবার সামনে দাঁড়াবেন না; বরং প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন। (তাবঈনুল হাকায়েক: ১/১৩৫, ফতোয়া দারুল উলুম: ৩/৪৩)
বর্তমানে অনেক বাসায় একজন পুরুষ হাফেজ ঠিক করা হয়, যিনি বাসায় গিয়ে নারীদের জামাতে তারাবি পড়ান। এভাবে রমজানের জন্য ঘরে আলাদা হাফেজ রেখে পুরুষ ইমামের পেছনে তারাবি পড়ার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেনি। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
তবে, এভাবে কেউ জামাতে তারাবি পড়ে নিলে তা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে নারীদের পর্দার বিধান যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। (তাবঈনুল হাকায়েক: ১/১৩৫, ফতোয়া দারুল উলুম: ৩/৪৩)
কোনো পুরুষ শরিয়ত অনুমোদিত কারণে মসজিদে যেতে না পারলে ঘরের মাহরাম নারীদের নিয়ে জামাতে তারাবি পড়তে পারেন, এক্ষেত্রে সবাই জামাতের সওয়াব পাবেন। কিন্তু গায়রে মাহরাম নারীদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। তা সত্ত্বেও মাহরাম নারীদের পাশাপাশি গায়রে মাহরাম নারীরা তাতে শরিক হতে চাইলে অবশ্যই পর্দার আড়ালে থাকবে। পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে জামাত করা বৈধ নয়। (খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/২২৮, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ২/২২৭)
স্বামী-স্ত্রী মিলে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে পেছনে দাঁড়াবে। এতটুকু সম্ভব না হলে, ডান পাশে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সমান হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ এভাবে দাঁড়ালে উভয়ের নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/৫৭২)
সাধারণ নামাজের জামাতে নারী-পুরুষ কাতারবদ্ধ হওয়ার সুন্নত পদ্ধতি হলো- প্রথমে বালেগ পুরুষ দাঁড়াবে, এরপর নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক দাঁড়াবে। যদি নারীরা জামাতে অংশগ্রহণ করে তারা সবার পেছনে দাঁড়াবে। (সুনানুল বাইহাকি: ৫১৬৬; হেদায়া: ১/২৩৯)
আল্লাহ তাআলা সব নারীকে মহান আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সজিব