ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

হাশরের মাঠে আরশের ছায়া পাবেন যারা!

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৪ মার্চ ২০২৫

হাশরের মাঠে আরশের ছায়া পাবেন যারা!

প্রতীকী ছবি

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের 'রোজার দিনে' নামক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ জ ম কুতুবুল ইসলাম নোমানী। অনুষ্ঠানে 'আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া পাবে যারা' বিষয়ে আলোচনায় অধ্যাপক কুতুবুল নোমানী পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

অধ্যাপক নোমানী বলেন, "হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ৭ ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।"

পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও জানান, "কিয়ামতের ভয়াবহতা নিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আজাবই কঠিন। (সুরা: হাজ্জ ১-২)"

অধ্যাপক কুতুবুল নোমানীর আলোচনায় যে ৭ ধরনের মানুষ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় থাকবেন-

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বা কোন দলের নেতা যাই হোক না কেন। নেতৃত্বের ব্যাপারে ন্যায় ও ইনসাফ। নেতা বলতে সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে বোঝানে হয়েছে। হাদিসে এসেছে ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি ২২৪৯, তিরিমিজি ১৭১১)

২. যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়
যৌবনে শক্তি থাকে, সামর্থ্য থাকে। মানুষ সে সময় সব কাজ ভালোভাবে করতে পারে। আমরা তো বয়স হলে আল্লাহকে স্মরণ করি, ইবাদত করি। যৌবন বয়সে আল্লাহকে তেমন স্মরণ করি না। অনেকে ছেলে-মেয়েরা অল্প বয়সে ইবাদত শুরু করলে মনে করেন বা মুখে বলেও থাকেন, এখন কি এসবের বয়স হয়েছে? এখন তো লেখাপড়া করার বয়স, ইবাদত-বন্দেগি করার বয়স হল যখন বৃদ্ধ হবে। অথচ আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল সা. যৌবন বয়সে ইবাদতকেই বেশি পছন্দ করেন।

৩. মসজিদে মন পড়ে থাকে এমন নামাজি
আল্লাহর সাথে সান্নিধ্য লাভের ব্যাপারে যার ব্যাকুলতা থাকে, তার মনই মসজিদে পড়ে থাকে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ার জন্য ব্যাকুল থাকে যার মন। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ার পর মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়, কিন্তু আবার নামাজের জন্য মসজিদে আসার কথা তার মনের মধ্যে জাগ্রত থাকে।

৪. আল্লাহর ভালোবাসায় পরস্পর মিলিত ও পৃথক হওয়া দুই ব্যক্তি
দুই জন লোক, যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসে। তাদের ভালবাসা থাকা কিংবা ভালবাসা না থাকা উভয়টা হয় আল্লাহকে কেন্দ্র করে। এখানে বোঝানো হয়েছে তাদের ভালবাসা দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যে, দুনিয়ার কোন স্বার্থে নয় বরং আল্লাহকে কেন্দ্র করে। আল্লাহ বলেন,

‘বলুন আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য।’ (সুরা: আন আম ১৩২)

৫. সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি
যে আল্লাহকে ভয় করে, গোপনে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেওনা। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং অসৎ পন্থা।’ (সুরা: বনি ইসরাঈল ৩২)

৬. গোপনে দান-সদকা করা ব্যক্তি
যে ব্যক্তি সম্পদ ব্যয় করে এমনভাবে, তার ডান হাত যা ব্যয় করে তার বাম হাত তা জানতে পারে না। দান-সদকা করার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে লোক দেখানোর চিন্তা থাকতে পারে। এটা আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো মৃত্যু আমার আগেই।’

৭. নির্জনে আল্লাহর ভয়ে কান্না করে এমন ব্যক্তি
যে ব্যক্তি নির্জনে বা গোপনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার চোখ অশ্রু ঝরাতে থাকে। যে ব্যক্তি মনের আবেগ মিশিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার মনে থাকে আল্লাহর চিন্তা-চেতনা, পরকালের চিন্তা-চেতনা, জাহান্নামের ভয়, এই ভয়ে সে কাঁদতে থাকে, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে, এ অবস্থা যার হয়, সে তো আল্লাহর খাস মানুষে পরিণত হয়। তাই কেয়ামতের দিন আল্লাহর খাস বান্দা হিসেবে তাকে আরশের নীচে ছায়া দেয়া হবে।

সূত্র: https://tinyurl.com/5af6377y

রাকিব

×