
ছবি: সংগৃহীত
ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থাপনা মসজিদ আল আকসা, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, হযরত ইব্রাহিম (আ.) কাবা নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে হযরত দাউদ (আ.)-এর নির্দেশে হযরত সুলাইমান (আ.) মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন।
পবিত্র কোরআন নাজিলের আগ পর্যন্ত এই মসজিদকে "বাইতুল মাকদাস" নামে ডাকা হতো। পরে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং এর নামকরণ করেন "মসজিদ আল আকসা", যার অর্থ "দূরের মসজিদ"। পবিত্রতার দিক থেকে মক্কা ও মদিনার পরই মসজিদ আল আকসার অবস্থান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তের শুরুতে মুসলমানরা কাবার পরিবর্তে এই মসজিদের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতেন।
হাদিসে বর্ণিত আছে, মেরাজের রাতে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে এই মসজিদে আসেন এবং পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তবে মসজিদ আল আকসা শুধু একটি একক স্থাপনা নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, যেখানে আরও পাঁচটি মসজিদ রয়েছে। ২৭ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৫,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
ঐতিহাসিকভাবে বহুবার এই মসজিদের দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছে। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে এটি মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ক্রুসেডের সময় ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু হয়। দখলদার বাহিনী একাধিকবার মসজিদটিতে হামলা চালিয়েছে, ১৯৬৯ সালে এক উগ্র ইহুদি মসজিদের একাংশে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও মসজিদটি বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৪৬ ও ১০৩৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মসজিদটি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে ফাতিমি খলিফা আলী আজ-জাহির এটিকে পুনঃনির্মাণ করেন। বর্তমানে যে মসজিদটি দেখা যায়, সেটিই মূলত খলিফা আলীর সংস্কার করা স্থাপনা।
ইসরাইলের দখলে থাকলেও মুসলমানদের বিশ্বাস, একদিন মসজিদ আল আকসা আবারও তাদের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসবে। কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী, এই মসজিদ ইসলামের গৌরবময় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে অটুট থাকবে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/ebLQXyAzwDU?si=MUds0rcVlgVLhgbl
এম.কে.