ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি পরকালে বিশ্বাস করে কোন দেশ?

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০২:২৭, ৪ মার্চ ২০২৫

সবচেয়ে বেশি পরকালে বিশ্বাস করে কোন দেশ?

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে পরকাল বা মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে নানা ধরনের বিশ্বাস রয়েছে। তবে, কিছু দেশ রয়েছে যেখানে পরকাল বিশ্বাস অনেক গভীরভাবে অন্তর্নিহিত এবং তা তাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চলুন, এমন কিছু দেশ সম্পর্কে জানি যেখানে পরকাল সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস রয়েছে।

১. ভারত
ভারত একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দেশ, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, শিখধর্ম এবং জৈনধর্মের মত বিভিন্ন ধর্মের চর্চা এখানে ব্যাপক। হিন্দুধর্মে পরকালের ধারণা অত্যন্ত শক্তিশালী। মানুষ মৃত্যুর পর আত্মা পুনর্জন্ম গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করে, যা 'কর্ম' এবং 'সঞ্জীবনী' সহ নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। পরকাল সম্পর্কিত এই বিশ্বাস ভারতীয় সমাজে এবং তাদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।

২. ইরান
ইরান একটি শিয়া মুসলিম দেশ, যেখানে ইসলাম ধর্মের পরকাল সম্পর্কিত বিশ্বাস খুবই শক্তিশালী। ইসলামের পরকাল সম্পর্কিত ধারায় বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর মানুষ তার কাজের হিসাব-নিকাশ করবে এবং তার পরবর্তী পরিণতি স্বর্গ বা নরকে নির্ভর করবে। এই ধারণা ইরানের মানুষের ধর্মীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা বিশ্বাস করে, পরকালে ভালো কর্মী বা পুণ্যবানরা বেহেশতে যাবে, আর খারাপ কর্মী বা পাপীরা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।

৩. মেক্সিকো
মেক্সিকোতে ‘ডে অফ দ্য ডেড’ (Dia de los Muertos) বা 'মৃতদের দিন' একটি প্রচলিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এখানে পরকাল সম্পর্কিত বিশ্বাস কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গভীরভাবে প্রোথিত। মেক্সিকানরা বিশ্বাস করে, মৃতরা জীবিতদের থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। প্রতি বছর, বিশেষ করে নভেম্বরের প্রথম দিকে, তারা মৃতদের আত্মাকে সম্মান জানানোর জন্য প্রার্থনা করে, উৎসব ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এটি পরকালের প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।

৪. থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। বৌদ্ধধর্মে মৃত্যুর পরের জীবনের ধারণা হল, আত্মা নতুন জীবনে পুনর্জন্ম গ্রহণ করবে। থাই জনগণ পরকাল এবং পুনর্জন্মকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং তারা প্রার্থনা ও দান করার মাধ্যমে আত্মার শান্তি কামনা করে থাকে। বৌদ্ধ মঠ এবং পূজার্চনা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি।

৫. মিশর
প্রাচীন মিশরের সংস্কৃতি ছিল পরকাল সম্পর্কিত বিশ্বাসের একটি উদাহরণ। মিশরের প্রাচীন ইতিহাসে পরকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেখানে মৃত্যুর পর ব্যক্তি তার আত্মা নিয়ে অন্য এক জীবনে প্রবেশ করে। আজও মিশরের মুসলিম জনগণের মধ্যে পরকাল বিশ্বাস খুবই দৃঢ়। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর আল্লাহ’র বিচারে প্রত্যেক ব্যক্তির পরিণতি নির্ধারিত হবে—পুণ্যবানরা জান্নাতে যাবে এবং পাপী ব্যক্তিরা দোজখে শাস্তি ভোগ করবে।

৬. থেরানিয়া ও পেরু
থেরানিয়া ও পেরুতে আদিবাসী জনগণের মধ্যে পরকাল বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইনকা সভ্যতায় পরকালকে কেন্দ্র করে নানা আধ্যাত্মিক প্রথা প্রচলিত ছিল। এখানে বিশ্বাস ছিল, মৃত ব্যক্তির আত্মা পরবর্তী জীবনে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া এবং ritually (ধর্মীয় আচার) সহ কিছু চুক্তি সম্পন্ন করতে হয়।


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরকাল সম্পর্কিত বিশ্বাসের ঐতিহ্য ও ধারণা ভিন্ন হলেও, তা প্রতিটি সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। ভারত, ইরান, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মিশর, এবং অন্যান্য দেশগুলির মধ্যে, পরকাল বিশ্বাসের গুরুত্ব প্রতিটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় প্রতিপাদ্যে প্রতিফলিত হয়। পরকাল সম্পর্কিত বিশ্বাস শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমাজের আচরণ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করে।        

নুসরাত

×