ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রোজা পৃথিবীর সব জাতি ও ধর্মের জন্য একটি ঐশী বিধান!

প্রকাশিত: ০১:১৯, ৪ মার্চ ২০২৫

রোজা পৃথিবীর সব জাতি ও ধর্মের জন্য একটি ঐশী বিধান!

ছবিঃ সংগৃহীত

রোজা শুধু ইসলাম ধর্মের জন্য নয়, বরং এটি পৃথিবীর সব জাতি ও ধর্মের জন্য একটি ঐশী বিধান। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, রোজা আগের উম্মতদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিল, যেভাবে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, আদম (আ.) থেকে শুরু করে সকল নবীর উম্মতদের মধ্যেই উপবাস পালনের প্রথা ছিল।

সব ধর্মেই উপবাসের প্রচলন

যদি আমরা বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তবে দেখতে পাই, ইসলাম ছাড়াও হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও উপবাস বা রোজার প্রচলন রয়েছে।

🔹 খ্রিস্টান ধর্মে যীশু (ঈসা আ.)-এর অনুসারীরা উপবাস পালন করে, যদিও তারা রোজার সময় পানি পান করার অনুমতি পায়।
🔹 ইহুদি ধর্মে উপবাসের বিশেষ কিছু দিন আছে, যেগুলো তারা কঠোরভাবে পালন করে।
🔹 হিন্দু ধর্মেও নির্দিষ্ট উপবাসের নিয়ম রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট দিনে খাবার গ্রহণে বিধিনিষেধ থাকে।

তবে ইসলাম ধর্মে রোজার যে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ও সুস্পষ্ট বিধানে নির্ধারিত হয়েছে।

কোরআনের ঘোষণা: রোজা সকল উম্মতের জন্য ফরজ ছিল

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রোজার বিধান নতুন কিছু নয়। বরং এটি পূর্ববর্তী সকল জাতির জন্যও ফরজ ছিল। ইসলাম ধর্মে এই বিধান চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং রমজান মাসে এক মাস রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে।

রোজার শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা

আল্লাহ তাআলা রোজাকে শুধুমাত্র ইবাদত হিসেবেই নির্ধারণ করেননি, বরং এতে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক বিশুদ্ধতার গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে।

শারীরিক উপকারিতা:

  • রোজা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।

  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আধ্যাত্মিক উপকারিতা:

  • রোজা আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

  • ধৈর্য ও সহনশীলতা বাড়ায়।

  • গুনাহ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়।

রমজানের তিনটি দশক: রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের তিনটি ভাগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন:

🔹 প্রথম দশক: রহমতের সময়
এই সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। যারা রোজা রাখে ও বেশি ইবাদত করে, তারা আল্লাহর দয়া লাভ করে।

🔹 দ্বিতীয় দশক: মাগফিরাতের সময়
যারা প্রথম দশকে আল্লাহর রহমত অর্জন করে, তাদের জন্য দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভের সুযোগ এনে দেয়। গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য এই সময় বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা উচিত।

🔹 তৃতীয় দশক: নাজাতের সময়
রমজানের শেষ দশকে যারা ইবাদত অব্যাহত রাখে, তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ লাভ করে। এই সময় লাইলাতুল কদর পাওয়া যায়, যা হাজার মাসের ইবাদতের সমান।

রমজানের রোজা সরাসরি আল্লাহ তাআলার বিধান, যা সকল নবীর উম্মতদের ওপর ফরজ ছিল। ইসলাম ধর্মে এটি চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মানবজাতির জন্য এর শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা অপরিসীম। তাই রমজানের সঠিক তাৎপর্য বোঝা ও যথাযথভাবে ইবাদত করা আমাদের দায়িত্ব।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার ফজিলত বুঝে তা যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন!

সূত্রঃ https://www.youtube.com/watch?v=d7Wb1ufyflg

ইমরান

×