ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৩ মার্চ ২০২৫

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৩য় দিবস

আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৩য় দিবস। হজরত সালমান ফারসী (রা.) উদ্ধৃত বিখ্যাত হাদিসের আলোকে এ মহান পবিত্র মাস তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশে আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। দ্বিতীয়াংশ ক্ষমা ও মার্জনার এবং শেষ অংশ দোজখ থেকে মুক্তিদানের।

মাহে রমজানের শুরু থেকেই আমাদের ইবাদত বন্দেগিতে ইখলাস সৃষ্টির লক্ষ্যে এ তিন দশকের সূচনা ও সমাপ্তির দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে এবং আমরা যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রয়েছি তারা একটু উদার ও সহানুভূতিপ্রবণ হলে সিয়াম সাধনার কার্যকারিতা ও পরিবেশ সর্বজনীন রূপ লাভ করবে। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে তার কর্মচারীর কাজের বোঝা কমিয়ে দেয় আল্লাহ তার গুনাহর বোঝা কমিয়ে দেন এবং দোজখের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেন।’ 
হাদিসের মর্মার্থ থেকে আমরা বুঝি, পবিত্র রমজান মাস আত্মগঠনের, সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার, পরস্পর সহানুভূতি ও সহমর্মিতার। এ মাস আধ্যাত্ম সাধনা ও কৃচ্ছ্রতা হাসিলের। এ মাস রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের। এর হুকুম আহকামগুলোও সে একই উদ্দেশ্য লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি। যেমন- ইফতার, সাহরি, তারাবিহ, খতমে কুরআন, যাকাত, ফিতরা, ঈদুল ফিতর ইত্যাদি। আমাদের পদে পদে খেয়াল রাখতে হবে, এসব আহকামের দুনিয়াবি, সামাজিক ও ব্যক্তি গঠনের যে দর্শন আর ফায়দা আছে, তা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা। 
বলাবাহুল্য, রমজানের এসব ব্যাপক উপকারিতা ও উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কিছু সঙ্গত কারণ আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। এক শ্রেণির হা-ভাতে বনী আদম আছে যারা এ মাস যাতে যথার্থভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অতিবাহিত করতে না পারে সেজন্য মারাত্মক অন্তরায় সৃষ্টি করে তাদের সমস্ত কুটবুদ্ধি দিয়ে। রোজাদারদের সঙ্গে তারা রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তাদের অনেকে আবার রোজাদারের ভান করেন, বাহ্যিক হজ ও সালাত আদায় করেন এবং তাদের বাসভবনে গরিব মানুষকে লাইন ধরিয়ে জাকাতদানের কসরত মহরতও করেন। 
অথচ সত্যিকারের মুসলমানদের মনোভাব হওয়া উচিত এমন, সিয়ামের মাস এসেছে আমি একশ’ ভাগ হালাল ব্যবসা করব। অতীতে অবৈধ ও জনক্ষতিকর লেনদেনের সঙ্গে আমি জড়িত থাকলেও এ মাসে সামাজিক কোনো ক্ষতিতে আমার হাত থাকবে না। কারণ, এর মাধ্যমে রোজাদারদের অভিশাপ আসে, খোদ মাহে রমজানের অভিশাপ বর্ষিত হয়। 
মাহে রমজানের আগমন উপলক্ষে আমাদের জীবনে আমরা ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারি। যেমন, সকালে আগেভাগে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস, নিয়মিত ও পরিমিত পানাহারের অভ্যাস, পাঞ্জেগানা নামাজের নিয়মানুবর্তিতা, সর্বদা মিষ্টভাষী ও মিতভাষী হওয়া, কুরআন তেলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা প্রভৃতি। যা মাহে রমজানের দিবা ও নৈশ শরিয়তি কর্মসূচিগুলো আমাদের চর্চা করার জন্য উৎসাহিত করে।
একইভাবে বহু নেতিবাচক আচরণ থেকেও আমরা দূরে থাকার অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারি। যেমন, ধূমপান, অযথা ও যত্রতত্র পানাহার, অন্যের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। পবিত্র মাহে রমজানের এসব ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়াবলি সামনে রেখে যখন আমরা সিয়াম সাধনা করব, তখন সত্যিকার অর্থে হাদিসের সুসংবাদ অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য বেহেশতের দরজাগুলো ক্রমে খুলে দেবেন। আর জাহান্নামের পথ আমাদের জন্য হবে রুদ্ধ। আল্লাহ পাক আমাদের সত্যিকারের সমঝ ও ফাহম বা আত্মোপলব্ধি দান করুন।

×