
ছবিঃ সংগৃহীত
সিয়াম সাধনার মূল শিক্ষা হলো আত্মশুদ্ধি, সংযম ও প্রতিটি কাজকে পরিশুদ্ধ করা। রমজান মাসে সব ধরনের ক্ষতিকর কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘রমজান’ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘রমজ’ থেকে, যার অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পোড়ানো ও ধ্বংস করা। অর্থাৎ, এই মাসে আত্মার অপবিত্রতা ও পাপকে দগ্ধ করে পরিশুদ্ধ করা হয়।
প্রতিদিন সুবহে সাদিক থেকেই শুরু হয় এই ঐশী প্রশিক্ষণ। সাহরি খাওয়া সুন্নত, তাই আলস্যকে পরিহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই খাবার গ্রহণ করতে হয়। সুবহে সাদিকের শুভ রেখা পূর্বাকাশে দৃশ্যমান হওয়ার আগেই শেষ করতে হয় সাহরি। অন্যদিকে, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই রোজা ভাঙা তথা ইফতার করা সুন্নত।
রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সময়ানুবর্তিতা ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সবকটি গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা হয়, যা একজন মুসলিমকে শৃঙ্খলিত জীবনের শিক্ষা দেয়। এই মাস মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির অনুপম শিক্ষা দেয়। এক মুমিনের হৃদয় তখন আরেক মুমিনের সুখ-দুঃখের খোঁজ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়, যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।" (তিরমিজি)
জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, তবে রোজাদারের সওয়াব বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।"
ইফতারের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি পায়, যা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, "তোমরা ঈমান আনা ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবে না এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া ঈমান পূর্ণ হবে না।"
রমজান হলো আত্মশুদ্ধি, উপবাস, প্রার্থনা ও ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের মাস। এই মাসে ধনী-গরিব একত্রে ইবাদত করে এবং সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তোলে। প্রকৃত রোজাদার কারও সঙ্গে প্রতারণা বা অন্যায় করতে পারেন না। এ মাসে রোজাদার অসহায়, হতদরিদ্র, দুর্বল, অসুস্থ, অনাথ ও ছিন্নমূল মানুষের খোঁজখবর রাখেন। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার ফলে একজন ধনী ব্যক্তি দরিদ্র মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখেন।
অতএব, রমজানের প্রকৃত শিক্ষা হলো আত্মসংযম, ত্যাগ ও মানবসেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ইমরান