
রমজানে শুধু পানাহার নয়, কামাচারেও সংযম জরুরি। অবশ্য রাতে স্ত্রী সহবাসে নিষেধাজ্ঞা নেই। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- اُحِلَّ لَكُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِكُمۡ ؕ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)
রোজা রেখে স্ত্রীর পাশে ঘুমানো, স্পর্শ, চুম্বন, জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি কাজ সাধারণত নিষেধ নয়। তবে, বীর্যপাতের আশংকা থাকলে এসব কাজ থেকে দূরে থাকা কর্তব্য।
আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে— নবী (স.) রোজা রেখে স্ত্রীকে চুম্বন করতেন; স্ত্রীর সঙ্গে মুবাশারা (আলিঙ্গন) করতেন এবং তিনি ছিলেন তাঁর যৌনাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি। (বুখারি: ১৯২৭ ও মুসলিম: ১১০৬)
এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে, নবীজি (স.) ছিলেন যৌনাকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি। তার মানে, রোজার দিন স্ত্রীর সঙ্গে সবকিছু তখনই দোষণীয় নয়, যখন সহবাস ও বীর্যপাত (যেকোনো মাধ্যমে) হওয়ার আশঙ্কা না থাকে। অনেকে মনে করতে পারেন, রোজা শুদ্ধ হওয়ার স্বার্থে স্ত্রী থেকে দূরে থাকা উত্তম। এটি সঠিক বুঝ নয়।। রাসুলুল্লাহ (স.) রোজা অবস্থাতেও তাঁর স্ত্রীদের চুম্বন করতেন, মেলামেশা করতেন ঘনিষ্ঠভাবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) চুম্বনের জন্য আমার নিকট ঝুঁকে এলেন, আমি বললাম- আমি তো রোজাদার, তিনি বললেন, আমিও রোজাদার। আয়েশা (রা.) বলেন, অত:পর তিনি ঝুঁকে এসে আমাকে চুম্বন করলেন।’ (আহমদ: ২৫০২২)
এমনকি আলিঙ্গনও করতেন তিনি। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) আমাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলে আমি তাকে বললাম, আমি তো রোজাদার , তিনি বললেন, আমিও রোজাদার। (মুসনাদে আহমদ: ২৫২৯০)
এখানে শিক্ষণীয় ব্যাপার হলো- এই একই হাদিসগুলোই আবার প্রমাণ করছে, সহবাস কিংবা বীর্যপাতের আশঙ্কা থাকলে চুম্বন, জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি কাজ পরিহার করা চাই।
শাইখ উসাইমিনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন— ফরজ রোজা পালনকারী স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর সঙ্গে এমন কিছু করা জায়েজ হবে না; যাতে তার বীর্যপাত হয়ে যেতে পারে। সব মানুষ এক রকম নয়। কারো বীর্যপাত দ্রুত হয়ে যায়; আবার কারো ধীরে ধীরে হয় এবং সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রাখে। যেমনটি আয়েশা (রা.) রাসুল (স.) সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি ছিলেন স্বীয় যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি।
আর সহবাসের ব্যাপারে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে! যার উপর রমজানের রোজা ফরজ, সে যদি রোজা রেখে সহবাসে লিপ্ত হয়, তাহলে তার উপর ৫টি বিষয় অবধারিত হয়ে যাবে। ১. গুনাহ। ২. রোজা ভেঙ্গে যাবে। ৩. সেদিনের রোজা কাজা করা। ৪. কাফফারা। ৫. দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত থাকাও ফরজ।
কাফফারা হলো- একজন কৃতদাস আজাদ করা। কৃতদাস না পেলে লাগাতার দুইমাস রোজা রাখা। লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখার সময় যদি মাঝখানে একদিনও বাদ যায়, তাহলে আবার শুরু থেকে গণনা আরম্ভ হবে, আগেরগুলো বাদ হয়ে যাবে। (মাবসুতে সারাখসি: ৩/৮২)
দুই মাস রোজা রাখতে ব্যর্থ হলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবে অথবা ৬০ জন মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ গম, আটা, চাল ইত্যাদি অথবা সমপরিমাণ নগদ টাকা দেবে। একজন মিসকিনকে ৬০ দিন দুই বেলা খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। (আলমগিরি: ১/৩০৫; রদ্দুল মুহতার: ৩/৩৯০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ-সুন্নাহ অনুযায়ী রমজানের রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সজিব