ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

রোখা রাখা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, বলছে বিজ্ঞান

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ১ মার্চ ২০২৫

রোখা রাখা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, বলছে বিজ্ঞান

ছ‌বি: সংগৃহীত

ইসলামিক ক্যালেন্ডারের পবিত্রতম মাস রমজান মাস। এই মাসে বিশ্বের মুসলিমরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার, পানি, ধূমপান এবং দাম্পত্য সম্পর্কসহ যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত থাকেন, যাতে তারা “তাকওয়া” বা আল্লাহর প্রতি সচেতনতা অর্জন করতে পারেন।

রোজা রাখা বা উপবাসের প্রচলন বহু প্রাচীন। প্রাচীন গ্রিকরা এটি শারীরিক সুস্থতার জন্য সুপারিশ করতেন, আর আধুনিক বিজ্ঞানও উপবাসের মানসিক ও শারীরিক উপকারিতার স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে “ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং”-এর মতো উপবাসের বিভিন্ন পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়েছে। ১২, ১৬ বা ২৪ ঘণ্টা উপবাস করা ছাড়াও আছে “৫:২ ফাস্টিং” পদ্ধতি, যেখানে সপ্তাহে দুই দিন ৫০০-৬০০ ক্যালরি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্র্যাড পিলনের ইট স্টপ ইট এবং মাইকেল মোসলির দ্যা ফাস্ট ডায়েট বইগুলো এসব আধুনিক উপবাস পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। মোসলি “টাইম-রেস্ট্রিকটেড ইটিং” বা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণের পক্ষে, যা মুসলিমদের রমজানের রোজার মতোই।

রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোজা বা উপবাস উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্যও উপকারী। উপবাসের মাধ্যমে শরীর টক্সিন মুক্ত হয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে বিশ্রাম দেওয়া হয়।

পুষ্টিবিদ ক্লেয়ার মাহি বলেন, “উপবাস অন্ত্রকে পরিষ্কার করে এবং এর প্রাচীরকে শক্তিশালী করে। এটি অটোফ্যাজি নামক একটি প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, যার মাধ্যমে কোষগুলো নিজেদের পরিষ্কার করে এবং ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে।”

রোজা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার সাথেও সরাসরি যুক্ত। এটি ব্রেইন-ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নামক একটি উপাদান নিঃসরণ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, সঠিকভাবে উপবাস করলে চর্বি কমে এবং মাংসপেশি গঠনে সহায়ক হয়।

সতর্কতা
রোজা রাখার অনেক উপকারিতা থাকলেও এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। যাদের আগে থেকেই কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা উপবাস শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ নাজমিন ইসলাম বলেন, “উপবাসের কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং ক্লান্তি বাড়ায়।” তিনি আরও বলেন, রমজানের সময় ওজন কমলেও স্বাভাবিক খাবারের রুটিনে ফিরে গেলে তা দ্রুত ফিরে আসতে পারে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে উপবাসের উপকারিতা বেশি। “সঠিকভাবে উপবাস করলে এটি হজম প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে,” যোগ করেন নাজমিন।

প্রাচীন এই অভ্যাসটি আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে নতুন মাত্রা পাচ্ছে। তবে উপবাসের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই এর উপকারিতা পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: https://www.aljazeera.com/news/2020/4/20/ramadan-2020-the-health-benefits-of-fasting

আবীর

×