ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশের ইফতার সংস্কৃতি: স্বাদ, ঐতিহ্য ও মিলনের গল্প

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের ইফতার সংস্কৃতি: স্বাদ, ঐতিহ্য ও মিলনের গল্প

ছবিঃ সংগৃহীত

রমজান এলেই বদলে যায় বাংলাদেশের প্রতিদিনের রুটিন, আর এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইফতার। দিনের দীর্ঘ উপবাসের পর ইফতার শুধু খাবার গ্রহণের বিষয় নয়; এটি এক ঐতিহ্য, এক সংস্কৃতি। ধর্মীয় আবহ, পারিবারিক মেলবন্ধন, এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার এক অনন্য উপলক্ষ হয়ে ওঠে ইফতার।

ইফতারের ঐতিহ্য ও জনপ্রিয় খাবার

বাংলাদেশের ইফতার সংস্কৃতির মূল ভিত্তি তৈরি হয়েছে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মাধ্যমে। যুগ যুগ ধরে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পিঁয়াজু, আলুর চপ, খেজুর, এবং হালিম ইফতারের অপরিহার্য অংশ হয়ে আছে। ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই খাবারের সমৃদ্ধি।

বিশেষ করে, হালিমের জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। মাংস, ডাল ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে তৈরি এই পদটি স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর হওয়ায় এটি অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া দই-চিড়া, জিলাপি এবং ফলের সালাদও ইফতারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।

ইফতারের আধুনিক ধারা ও পরিবর্তন

আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে ইফতারেও এসেছে নানা পরিবর্তন। এখন শহরাঞ্চলে ফাস্টফুড ও কন্টিনেন্টাল খাবারের প্রবণতা বাড়ছে। ফ্রাইড চিকেন, পিজ্জা, বার্গারসহ বিভিন্ন বিদেশি আইটেম ইফতারের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। রেস্টুরেন্টগুলোও ইফতার স্পেশাল মেনু চালু করছে, যা তরুণদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

অনলাইনে ইফতার ডেলিভারির প্রবণতাও বাড়ছে। ব্যস্ত নগর জীবনে অনেকেই সময় বাঁচাতে ইফতার বাজার করতে না পারলে বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস থেকে খাবার অর্ডার করেন।

সামাজিক সংহতি ও ইফতার

ইফতার শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক সংহতির প্রতীকও বটে। রমজানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মসজিদ ও বিভিন্ন সংস্থা দরিদ্রদের জন্য ইফতার বিতরণের আয়োজন করে। এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্রিত করে এবং সহমর্মিতার চেতনাকে জাগিয়ে তোলে।

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংযোগ

বাংলাদেশের ইফতার সংস্কৃতি একদিকে ঐতিহ্যের ধারক, অন্যদিকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে মূল চেতনা একই – ইফতার শুধু খাবার নয়, এটি আত্মসংযম, ভাগাভাগি ও আনন্দের প্রতীক। সময়ের সাথে পরিবর্তন আসলেও, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের এই সংস্কৃতি বাঙালির ঐতিহ্যে অমলিন থাকবে।

ইফতার কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাংলাদেশিদের আবেগ, ভালোবাসা, এবং ঐতিহ্যের অংশ। দেশীয় খাবারের স্বাদ ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে ইফতার সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে, যা আমাদের খাবারের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করছে।

আসিফ

×