
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে ছিনতাই , চাঁদাবাজি ও ডাকাতির শাস্তি
– মুমিনুল ইসলাম আযহারি
প্রত্যেক সমাজে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জীবন, সম্পদ ও মানসম্মানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম প্রধান শর্ত। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। ছিনতাই , চাঁদাবাজি বা ডাকাতি (حرابة) সমাজের জন্য একটি মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের জান-মালের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। ইসলামে এই অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা কুরআন, হাদিস ও ফিকহ গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
ডাকাতি কী?
শরীয়তের ভাষায় ডাকাতি (حرابة) বলতে বোঝায়—একদল অস্ত্রধারী ব্যক্তি জনসাধারণের চলাচলের পথ অবরোধ করে তাদের সম্পদ লুট করা, হত্যা করা, কিংবা সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ইসলামী আইনে এই অপরাধীদের “মুহারিব” (المحاربون) বলা হয়, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
ডাকাতির শাস্তি সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ডাকাতদের শাস্তির বিষয়ে বলেন:
﴿إِنَّمَا جَزَاءُ ٱلَّذِينَ يُحَارِبُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي ٱلْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُواْ أَوْ يُصَلَّبُواْ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْاْ مِنَ ٱلْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي ٱلدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي ٱلْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾
(সূরা আল-মায়েদা: ৩৩, মাদানী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা: ১০৬)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, যারা ডাকাতি করে, হত্যা করে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
ডাকাতদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির বিধান:
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ডাকাতদের শাস্তি তাদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী পৃথক পৃথকভাবে নির্ধারিত হয়েছে:
১. যদি ডাকাতরা হত্যা ও সম্পদ লুণ্ঠন উভয়ই করে:
তাদের প্রথমে হত্যা করা হবে, এরপর শূলবিদ্ধ করা হবে, যেন তারা সমাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা হয়।
২. যদি তারা হত্যা করে কিন্তু সম্পদ লুট না করে:
তাদের শুধু হত্যা করা হবে।
৩. যদি তারা সম্পদ লুট করে কিন্তু কাউকে হত্যা না করে:
তাদের ডান হাত ও বাম পা কেটে ফেলা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে ফেলা হবে।
৪. যদি তারা কাউকে হত্যা না করে বা সম্পদও লুট না করে, কিন্তু ভীতি সৃষ্টি করে:
তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত (বহিষ্কৃত) করা হবে, অথবা জেলখানায় বন্দি রাখা হবে।
হাদিসের আলোকে ডাকাতদের শাস্তি:
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর যুগে ডাকাতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
১. ডাকাতদের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পদক্ষেপ:
একবার কিছু লোক মদীনায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের জন্য উটের দুধ ও মূত্র পানের পরামর্শ দেন। পরে তারা সুস্থ হলে নবীজির উট চুরি করে পালিয়ে যায় এবং উটের রাখালদের হত্যা করে। নবীজি তাদের ধরিয়ে এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
হাদিস:
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ نَاسًا مِنْ عُرَيْنَةَ قَدِمُوا عَلَى النَّبِيِّ ﷺ فَاجْتَوَوُا الْمَدِينَةَ، فَأَمَرَهُم أَنْ يَلْحَقُوا بِإِبِلِ الصَّدَقَةِ، فَيَشْرَبُوا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا، فَفَعَلُوا، فَصَحُّوا، فَارْتَدُّوا، وَقَتَلُوا رُعَاتَهَا، وَاسْتَاقُوا الْإِبِلَ، فَبَعَثَ فِي آثَارِهِم، فَأُتِيَ بِهِم، فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ، وَسَمَرَ أَعْيُنَهُمْ، وَأَلْقَاهُمْ فِي الشَّمْسِ، فَمَاتُوا
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৬৮০২, دار ابن كثير, পৃষ্ঠা: ৬৫৭)
ডাকাতির শাস্তির প্রভাব ও উপকারিতা:
– সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।
– মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
– অপরাধীদের জন্য কঠোর সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়।
– নিরপরাধ মানুষ ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পায়।
উপসংহার:
ইসলাম শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার ধর্ম। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ডাকাতি ও সন্ত্রাস চালায়, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর শাস্তির বিধান দিয়েছে। কুরআন, হাদিস ও ফিকহগ্রন্থের আলোকে এটি স্পষ্ট যে, ডাকাতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। ইসলামের এই বিধান বাস্তবায়ন করা হলে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হবে এবং মানুষ নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। আমিন।
সূত্রঃ https://bdposts.com/8062/
ইমরান