
ছবি: সংগৃহীত
আপনি যদি বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিমদের মধ্যে একজন হন, যারা আসন্ন রমজান মাসে রোজা পালন করবেন, তবে এই লেখাটি আপনার জন্য।
রমজান মাসে রোজা অনেক ধর্মীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং সাধারণত এটি নিরাপদভাবে পালন করা সম্ভব। তবে, যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে — যেমন গর্ভাবস্থা, স্তন্যদান, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো অসুস্থতা — তবে রোজা রাখার পূর্বে আপনার ধর্মীয় নেতা এবং/অথবা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত, যেন আপনি নিরাপদে রোজা পালন করতে পারেন।
এছাড়া, যদি আপনি কোনো ওষুধ সেবন করেন, তবে আপনার স্বাস্থ্য চিকিৎসকের কাছে জিজ্ঞাসা করুন যে আপনি কি সেগুলো খাবার ও পানীয় ছাড়া নিতে পারবেন কিনা। যদি আপনি রোজা রাখা অবস্থায় অসুস্থ বোধ করেন, বিশ্রাম নিন, কিছু ফলের রস পান করতে পারেন, এবং যদি আপনার লক্ষণগুলো ঠিক না হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিচে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রমজান পালনের কিছু টিপস দেওয়া হলঃ
১. হাইড্রেটেড থাকুন
রাতের বেলায় একাধিকবার পানি পান করার চেষ্টা করুন, এমনকি যদি আপনি খুব বেশি তৃষ্ণার্ত না হন — তৃষ্ণা হলো শরীরের পানির অভাবের সঙ্কেত। ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পরিহার করুন কারণ এগুলো শরীরের পানির পরিমাণ কমাতে পারে। মনে রাখবেন, ইফতার দিয়ে রোজা ভাঙার সময় পানি পান করা শুধু প্রচলিত নিয়ম নয়, বরং এটি আপনার শরীরে সঠিক পরিমাণ পানি প্রবাহিত করতে সাহায্য করে, খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আগে। তবে, খুব বেশি পানি একবারে পান করবেন না, কারণ তা শরীরের ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, যা পানির বিষক্রিয়ার মতো বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
২. খাবারে বৈচিত্র্যতা আনুন
সন্ধ্যাবেলায় খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্য রাখুন। আপনার শরীরে এই সময় আগের চেয়ে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন। শাকসবজি, ফলমূল, লীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন জলপাই তেল ও বাদাম) — এগুলি শরীরের সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করবে।
৩. খাবারের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ
আপনার শরীর প্রায় ২০ মিনিট সময় নেয় বুঝতে যে এটি পর্যাপ্ত খাবার পেয়েছে কিনা। তাই ইফতার করার সময় বেশি খাবেন না। মনোযোগ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং যখন আপনার ক্ষুধা সত্যিই পূর্ণ হয়ে যায় তখন থামুন, এটি আপনার শরীরের উপর চাপ কমাবে এবং আপনাকে আরও শক্তি দেবে।
৪. গতিশীল থাকুন
যদিও রোজা রাখা শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে, তবুও পুরোপুরি অবসর গ্রহণ করবেন না। আপনি যদি সাধারণভাবে সকালবেলা ব্যায়াম করেন, তবে ইফতার পরবর্তী সময়ে আপনার শরীর কেমন অনুভব করে তা দেখুন। দিনবেলা ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়, কারণ এতে আপনি দ্রুত ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারেন। ছোট ছোট হাঁটা (যেমন ক্লাসে যাওয়া বা কাজকর্ম করা) বা কিছু স্ট্রেচিং শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৫. সেহরি (সূর্যোদয়ের পূর্ববর্তী খাবার) সফল রাখার কিছু রহস্য
একটি সুষম খাবারের উপাদান আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে, যা আপনাকে ভালো শক্তি দেয়। সেহরিতে কিছু উপাদান যা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
- তাজা ফল এবং শাকসবজি
- প্রোটিন — যেমন দুধ, দই, ডিম, বাদাম
- স্বাস্থ্যকর চর্বি — যেমন বাদাম এবং জলপাই
৬. আপনার জন্য যা উপযুক্ত তা খুঁজুন
আপনার ঘুমের সময়সূচির উপর নির্ভর করে, আপনি আপনার শক্তি বজায় রাখতে কিভাবে এবং কখন খাবেন তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
৭. শরীরকে প্রাধান্য দিন
প্রতিটি ব্যক্তি আলাদা এবং তাদের খাওয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন হতে পারে। যদি আপনি রোজা রাখতে সমস্যা অনুভব করেন এবং এই টিপসগুলো আপনার জন্য কাজ না করে, তবে একজন ডায়েটিশিয়ান বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন, যাতে তারা আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও নির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে পারেন।
৮. সময়টিকে উপভোগ করুন!
এটি বছরের সবচেয়ে আনন্দময় মাস! অন্যদের সঙ্গে খাবার উপভোগ করুন, সদাচারণ প্রদর্শন করুন, এবং আপনার শরীর ও অন্যদের প্রতি ধৈর্য ধারণ করুন।
আবীর