ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

জান্নাতি ফল খেজুর

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১০:১৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জান্নাতি ফল খেজুর

ছবি: সংগৃহীত

জান্নাতে পাওয়া যাবে, এমন কয়েকটি ফলের মধ্যে খেজুর একটি। স্বাদে মিষ্টি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল।

পবিত্র কোরআন শরীফেও খেজুরের কথা কয়েকবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
”মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি। পরে আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং আমি তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাক-সবজি, জাইতুন, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফল ও গবাদি খাদ্য। এটা তোমাদের ও তোমাদের জীবজন্তুর ভোগের জন্য।” (সুরা আবাসা : আয়াত ২৪-৩২)
এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে অন্যান্য খাবারের সাথে খেজুর ভোগ করার কথা বলা হয়েছে। এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ও নিয়ামত। আমাদের দেশে রমজান মাস ছাড়া খেজুর তেমন একটা খাওয়া হয় না।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন উমরের (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ”একটি গাছ আছে যা একটি মুসলিমদের অনুরূপ। তার পাতা পড়ে না। ঐ গাছটি কী?” নবীজি (সাঃ) নিজেই বলেছিলেন, ”এটাই খেজুর গাছ”।
এর মর্মার্থ হচ্ছে, খেজুর গাছ অনেকটা মুসলিম জাতির ন্যায়। সে জাতির ধর্মের প্রতি যেমন কোন নড়চড় হয় না, তেমন খেজুর গাছেরও পাতা নড়ে না। সে জাতি যেমন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, তেমন খেজুরও সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। আর সেই জাতির উপকারের জন্যই আল্লাহ তা’আলার এই নিয়ামত।

খেজুরের বিদ্যমান উপাদানসমূহ

খেজুরে প্রায় সব ধরণের খাদ্য উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহে বিভিন্নভাবে পুষ্টির যোগান দেয়। এসকল খাদ্য উপাদানগুলো হলো- প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি১, বি২, বি৪, বি৫, বি৬, বি৯, সি, ই, কে), কার্বোহাইড্রেট, বেটা ক্যারোটিন লুটিন জিজানথেন, ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রণসহ আরও অনেক উপাদান। খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করতে পারে। তাই প্রতিদিন খেজুর খাওয়া উচিত।

খেজুরের উপকারিতা

১। খেজুরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে সহায়তা করে। যা মানুষকে মানসিক প্রফুলতা দেয় এবং মন ভাল রাখতে সহায়তা করে।
২। খেজুর শরীরে গ্লূকোজ এর ঘাটতি পূরণ করে শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩। শরীরে রক্ত শূণ্যতা পূরণে খেজুরে থাকা আয়রন ভাল উপকারে আসে।
৪। ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
৫। খেজুরে বিদ্যমান ডায়েটরি ফাইবার কলেস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৬। পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ, শুষ্ক কাশি এবং এ্যাজমা রোধে খেজুর অনেক উপকারী।
৭। খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে এবং স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
৮। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। ফলে যারা অল্প পরিশ্রমেই দুর্বল হয়ে যায়, তাদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট পথ্য।
৯। খেজুর পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে ।
১০। খেজুরের ক্যালসিয়াম দেহের হাড় ও দাঁতের মাড়ি মজবুত করে।
১১। খেজুরে থাকা ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
১২। খাদ্যে অরুচি দূর করতে মরিয়ম খেজুর ব্যাপক সহায়তা করে।
১৩। খেজুরের ফাইবার এবং বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড হজম প্রক্রিয়া ভাল রাখে।
১৪। খেজুরে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
১৫। খেজুরে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

সতর্কতা

খেজুরের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেজুর খাওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

রমজানে, খেজুর ছাড়া ইফতার অসম্পূর্ণ মনে হয়। এছাড়া মদিনার এই উৎকৃষ্ট ফল, সারাদিন রোজা রাখার জন্য ও রোজা রাখার পরে পর্যাপ্ত শক্তির যোগান দেয়। তাই রমজান মাসে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার পাশাপাশি সারা বছর এই উপকারী জান্নাতি ফলটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

সূত্র: https://naturals.com.bd/%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AB%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC/

মায়মুনা

×