
ছবি: সংগৃহীত
আখেরী চাহার সোম্বা একটি ফারসি শব্দ, এর অর্থ হলো শেষ বুধবার। আখেরী অর্থ শেষ আর চাহার সোম্বা অর্থ বুধবার।
আখেরী চাহার সোম্বা বলতে বোঝানো হয় হিজরী সফর মাসের শেষ বুধবারকে।
আখেরী চাহার সোম্বাকে আমাদের দেশে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
আখেরী চাহার সোম্বাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন মনে করার মূল কারণ হলো, মহানবী (সাঃ) মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। এই অসুস্থতা থেকে সফর মাসের শেষের দিকে তিনি কিছুটা আরোগ্য লাভ করেন। এরপর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান এবং তিনি আর আরোগ্য লাভ করেননি। এরপর তিনি মারা যান।
সফর মাসের শেষের দিকে ঠিক কোনদিন তিনি সুস্থতা লাভ করেছিলেন এ বিষয়ে কেউ কেউ বলেন, সেটি বুধবার ছিল। সে কারণে আমাদের আনন্দিত হওয়া উচিত, ইবাদত করা উচিত, দান-সদগাহ্ করা উচিত যেমনটি সাহাবায়ে কেরামরা করেছেন বলে তাঁরা দাবি করে থাকেন।
মূলত, হিজরী সফর মাসের শেষদিকে মহানবী (সাঃ) সুস্থ হলেও সে দিনটি ঠিক কী বার ছিল সে বিষয়ে সরাসরি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বা সাহাবায়ে কেরামদের থেকে বর্ণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। বুধবারেই তিনি আরোগ্য লাভ করেছিলেন এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া ও অপ্রমানিত একটি বিষয়। বরং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এবং ইবনে কাসির (রাঃ), ইসলামের ইতিহাসের দুইজন পন্ডিত পুরুষ। একজন হাদিস শ্বাস্ত্রের মহাপন্ডিত ও আরেকজন তফসীর শ্বাস্ত্রের মহাপন্ডিত। তারা দুজনই তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, যেদিন মহানবী (সাঃ) কিছুটা আরোগ্য লাভ করেন সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বুধবারেই তিনি আরোগ্য লাভ করেছিলেন এ কথাটি গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত, সাহাবায়ে কেরামরা দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করতেন এ বিষয়টিও অসত্য। দিনটিতে আমাদের বিশেষ কোনো করণীয় আছে সে বিষয়েও সাহাবায়ে কেরামদের থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়না। তাজকেরাতুল আউলিয়া, আমাদের দেশের মোকসেদুল মোমিনিন ইত্যাদি গ্রন্থে প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন আমলের কথা বলা হয়েছে। যেমন সূর্যোদয়ের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া, যার প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া ও নামায শেষে বিশেষ দরুদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্ক পন্ডিত আব্দুল হাই লাখনভি (রাঃ) তাঁর গ্রন্থে প্রমাণসহ সেটিকে জাল প্রমাণ করেছেন।
মহানবী (সাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। সে দিনগুলোকে সাহাবায়ে কেরাম বা তাবে তাবেঈনরা বিশেষভাবে পালন করতেন এ বিষয়ক কোনো প্রমাণ কোরআন-হাদিসে নেই।
মায়মুনা