ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানেই কেন কোরআন নাজিল হয়েছে?

প্রকাশিত: ১৪:১১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রমজানেই কেন কোরআন নাজিল হয়েছে?

ছবি: সংগৃহীত।

রমজান মাসের গুরুত্ব মুসলিমদের জন্য অপরিসীম, কারণ এটি হলো সেই মাস যেখানে আল্লাহর শেষগ্রন্থ কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন নাজিল হওয়ার ব্যাপারটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রশ্ন হলো, কেন কোরআন রমজান মাসে নাজিল হয়েছে? এর পেছনে কি কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে?

কোরআন নাজিল হওয়ার ইতিহাস

কোরআন পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি অসীম হেদায়েত (পথ নির্দেশ) হিসেবে নাজিল হয়েছে। এটি একে একে প্রায় ২৩ বছর ধরে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হতে থাকে। তবে এই নাজিলের শুরুটা ছিলো রমজান মাসের ১লা তারিখে, যখন প্রথম ওয়াহি (প্রকাশ) আসে হেরা গুহায়। হেরা গুহার ঘটনাটি মুসলিম ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতা জিবরিল (আ.) নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম আয়াতটি (সুরা আল-আলাকের প্রথম ৫ আয়াত) পাঠান। এই ঘটনা ঘটে ছিলো রমজান মাসের শেষ দশদিনে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।

রমজানের মাহাত্ম্য

রমজান হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত, রহমত ও ক্ষমার মাস। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “রমজান মাস সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশ এবং স্পষ্ট চিহ্ন।” (সুরা আল-বাকারাহ, ২:১৮৫)

রমজান মাসের পবিত্রতা এবং এর মধ্যে কোরআনের নাজিল হওয়া একে অত্যন্ত বিশেষ করে তুলেছে। এটি আমাদের জন্য একটি সংকেত যে, এই মাসে আমরা আল্লাহর কাছে আরও কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পাই। কোরআন নাজিল হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পথ দেখানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, যা মানুষের জীবনে শান্তি, সমতা, এবং সঠিক পথে চলার জন্য প্রয়োজনীয়।

রমজান মাসে কোরআন নাজিল হওয়ার তাৎপর্য

১. আত্মশুদ্ধির মাস: কোরআন রমজান মাসে নাজিল হওয়ার মাধ্যমে আমাদের জানানো হয়েছে যে, এই মাসে আমাদের আত্মশুদ্ধি ও তাওবা করার এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এটি মানুষের ভুলত্রুটি থেকে ফিরে আসার এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করার সময়। রমজান মাসে সিয়াম (রোজা) পালন করে, আমরা নিজেকে শুদ্ধ করার এবং আল্লাহর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি।

২. আলোর মাস: কোরআন হলো আল্লাহর আলো, যা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে সত্যের পথে চলতে সাহায্য করে। রমজান মাসে কোরআন নাজিল হওয়া আমাদের জানান দেয় যে, এই মাসে আল্লাহর রহমত ও আলো আমাদের জীবনে প্রভাবিত হতে পারে।

৩. বিশ্বজনীন পথনির্দেশ: কোরআন শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য পথনির্দেশ। রমজান মাসে কোরআন নাজিল হওয়ার মাধ্যমে মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া হয়েছে। কোরআনে মানুষের জীবনে শান্তি, ন্যায়, সহানুভূতি ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

৪. লাইলাতুল কদর: রমজান মাসের অন্যতম বিশেষ রাত হলো "লাইলাতুল কদর", যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ একটি রাত। কোরআন এই রাতেই নাজিল হতে শুরু করে এবং এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র রাত হিসেবে চিহ্নিত। এই রাতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা অসীম, আর এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ, যখন তারা তার রহমত লাভ করতে পারে।

কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহর উদ্দেশ্য

রমজান মাসে কোরআন নাজিল করার মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে সত্যের পথে পরিচালিত করতে চেয়েছেন। কোরআন হচ্ছে মানবতার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়েত, যা মানুষের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক জীবনের প্রতিটি দিককেই সঠিক পথে পরিচালিত করে। কোরআনের আয়াতগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়, শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।


রমজান মাসের মাধ্যমে কোরআন নাজিল হওয়া একটি বিশেষ রহমত, যা মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছে ফিরে আসার একটি সুযোগ প্রদান করে। এটি শুধু ধর্মীয় দিক দিয়ে নয়, বরং মানবিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান হলো আল্লাহর কাছে তাওবা করার, তাঁর রহমত ও ক্ষমা অর্জন করার এবং জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার মাস। কোরআন রমজান মাসে নাজিল হওয়া আমাদের এক বিশেষ নির্দেশনা দেয়, যা আমাদের জীবনে ন্যায়, শান্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ প্রশস্ত করে।

নুসরাত

×