ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কাবা শরিফের ভৌগোলিক অবস্থান ও আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কাবা শরিফের ভৌগোলিক অবস্থান ও আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়

একসময় পৃথিবীতে শুধুই পানি ছিল। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথম জমিন সৃষ্টি হয় কাবা ঘরের নিচের অংশ থেকে। জমিনে পরিণত হওয়ার আগে এটি ছিল সাদা ফেনার মতো, যা একসময় কঠিন মাটিতে রূপ নেয় এবং চারপাশ ধীরে ধীরে ভরাট হতে থাকে। সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশ, যা পরে বিভক্ত হয়ে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে পরিণত হয়।

কিন্তু কাবা শরীফ কি শুধুই একটি ইবাদতের স্থান? নাকি এর ভৌগোলিক ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্বও রয়েছে? আধুনিক গবেষণায় উঠে আসছে কাবা শরীফের রহস্যময় বৈজ্ঞানিক দিক।

পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে কাবা ঘর?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌগোলিকভাবেই কাবা শরীফ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ড. হোসাইন কামাল উদ্দিন আহমদ তাঁর পিএইচডি গবেষণায় তুলে ধরেছেন, কাবা শরীফকে পৃথিবীর মেরুদণ্ড ও মধ্যস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সৌদি আরবের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. খালিদের গবেষণায়ও উঠে এসেছে, কাবা শরীফের অবস্থান গোল্ডেন রেশিও বা সোনালী অনুপাতের পয়েন্টে, যা গণিতের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার (১.৬১৮)।

গোল্ডেন রেশিও এবং কাবা শরীফ

গোল্ডেন রেশিও প্রকৃতির এক রহস্যময় সংখ্যা, যা ফুলের পাপড়ির বিন্যাস, গ্যালাক্সির বিন্যাস এমনকি মানবদেহেও পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দূরত্বের অনুপাত এবং কাবা শরীফের অবস্থান ১.৬১৮, যা এক বিস্ময়কর সত্য।

পৃথিবীর চুম্বকীয় কেন্দ্র এবং জিরো গ্র্যাভিটি জোন

বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, কাবা শরীফ এমন এক স্থানে অবস্থিত, যেখানে পৃথিবীর ভূ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ। এটি পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী জিওম্যাগনেটিক এনার্জি ফিল্ড। এমনকি এখানে শূন্য মহাকর্ষীয় টান অনুভূত হয়, যা মানবদেহের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাওয়াফ এবং মহাবিশ্বের নিয়ম

ইসলামে হজের সময় কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার তাওয়াফ করা হয়, যা বাঁ দিক থেকে ঘোরার নিয়মে সম্পন্ন হয়। গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের সকল গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি বাঁ দিকে আবর্তিত হয়। এটি বোঝায় যে, কাবার চারপাশে তাওয়াফ করাও মহাবিশ্বের নিয়মেরই একটি অংশ।

বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় বিস্ময়ের সমন্বয়

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটি মক্কায় অবস্থিত, যা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য হেদায়েতের কেন্দ্র।" (সূরা আলে ইমরান: ৯৬)

গবেষকদের মতে, কাবা শরীফ শুধু ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি এক বৈজ্ঞানিক বিস্ময়। গোল্ডেন রেশিও, চুম্বকীয় শক্তি ও মহাকর্ষীয় প্রভাব—সবকিছুই প্রমাণ করে যে, এটি নিছক কাকতালীয় কিছু নয়, বরং মহান সৃষ্টিকর্তার এক নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ।

রাজু

×