
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ১৮০০ বছর আগে সংঘটিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। কোরআনে বর্ণিত এই ঘটনার সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।
রোমান সম্রাট ডিসিয়াসের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সাতজন সত্যান্বেষী যুবক পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সেখানে দীর্ঘ ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। কোরআনে বর্ণিত এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।
আল কোরআনের ১৮ নম্বর সূরা ‘আল কাহাফ’ -এর ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা ঘুমন্ত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম ডানদিকে ও বামদিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে তবে পেছন ফিরে পালিয়ে যেতে এবং তাদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে।"
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখিয়েছেন, দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে শুয়ে থাকলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। দেহের এক পাশে ক্রমাগত চাপ পড়লে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা শরীরে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের ক্ষতকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘প্রেসার সোর্স’ বলা হয়। দীর্ঘ সময় রক্ত প্রবাহ কম থাকলে ত্বকের কোষ ধীরে ধীরে মারা যেতে শুরু করে, যা জীবননাশের কারণও হতে পারে।
তাই চিকিৎসকেরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস) রোগীদের নির্দিষ্ট সময় পর পর পার্শ্ব পরিবর্তন করানোর পরামর্শ দেন। কোরআনে যুবকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাদের দেহকে নিয়মিত পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলেন, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সূরার ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "তখন আমি বহু বছরের জন্য গুহায় তাদের কান বন্ধ করে দিলাম।"
গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, ঘুমন্ত অবস্থায়ও মানুষের কান সক্রিয় থাকে এবং এটি একমাত্র ইন্দ্রিয় যা সব সময় সজাগ থাকে। এজন্য মানুষ অ্যালার্ম বাজলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।
কোরআনে বলা হয়েছে, গুহাবাসী যুবকদের কানের পর্দার উপর পর্দা ফেলা হয়েছিল, যাতে তারা বাইরের কোনো শব্দ শুনতে না পারে এবং শত শত বছর ঘুমন্ত থাকতে পারে। গবেষকেরা মনে করেন, গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে শ্রবণশক্তি বন্ধ করাটাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়।
কোরআনের প্রতিটি শব্দেই রয়েছে গভীর তাৎপর্য। যুগে যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে কোরআনের বহু বাণী নতুন ব্যাখ্যা লাভ করেছে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন, আল কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের ঘটনা কেবল ধর্মীয় আখ্যান নয়, বরং এতে রয়েছে গভীর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।
কোরআনের প্রতিটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অর্থ বের করার এই প্রচেষ্টা চলতেই থাকবে, আর এর মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে কোরআন শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং মানবজীবনের এক অনন্য দিকনির্দেশনা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Kji0_qurrAM?si=aQarD48J7fA4BfVF
এম.কে.