
ছবি: সংগৃহীত।
রোজা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ইবাদত নয়, এর রয়েছে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওজন বেশি কিংবা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য রোজা হতে পারে অত্যন্ত উপকারী। তবে শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোজা পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোজা
যারা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। রোজা অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যারা ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ওষুধ নেন, তাদের জন্য রোজার সময় ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করা প্রয়োজন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রোজা
রোজা মন্দ কোলেস্টেরল (এলডিএল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের জন্য রোজা একটি কার্যকর উপায়।
ওজন কমানোর জন্য রোজা
অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, বাতের ব্যথা, ও গাউটের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোজা ওজন কমাতে সহায়ক, যা এসব রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ফলে হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। রোজা রক্তনালির চর্বি কমাতে ও এথেরোসক্লেরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পেপটিক আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
অনেকের ধারণা, রোজা পেপটিক আলসার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাস্তবে দেখা যায়, রোজার সময় নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে অ্যাসিডের মাত্রা কমে। সঠিকভাবে রোজা পালন করলে পেপটিক আলসারের উপশম হয় এবং গ্যাস্ট্রাইটিস ও আইবিএসের মতো রোগে উপকার মেলে।
শ্বাসকষ্ট ও এজমা রোগীদের জন্য রোজা
শ্বাসকষ্ট বা এজমার রোগীদের জন্য রোজা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। বরং মানসিক প্রশান্তি ও সংযমের কারণে রোগের প্রকোপ কম থাকে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেহরি ও ইফতারের সময় গ্রহণ করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোজা
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা সম্ভব যদি মা ও সন্তানের শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখা উচিত নয়। যদি কোনো জটিলতা থাকে, তবে রোজা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
রোজা শুধুমাত্র দেহের জন্য নয়, মনের শৃঙ্খলা ও সংযম শেখায়। যারা মনে করেন রোজা রাখলে শারীরিক সমস্যা হবে, তাদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আল্লাহর প্রতি আস্থা রেখে এবং সঠিক নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে তা দেহ-মনের জন্য উপকারী। কোনো অজুহাতে রোজা থেকে বিরত না থেকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে রোজা পালন করাই উচিত।
সায়মা ইসলাম