ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানে উমরাহ কি হজের সমতুল্য? 

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রমজানে উমরাহ কি হজের সমতুল্য? 

রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে এবং এই মাসেই ইবাদতের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। তাই রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। 

অন্যান্য ইবাদতের মতো রমজানে ওমরাহ পালন করাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমতুল্য ইবাদত (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২৯৯৩)। অর্থাৎ, যারা হজের সুযোগ পান না, তারা রমজানে ওমরাহ করে হজের সওয়াব অর্জন করতে পারেন।

 

ওমরাহর গুরুত্ব ও ফজিলত

ওমরাহ পালন পাপ মোচন ও রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সব গুনাহের কাফফারা হয়ে যায় (বুখারি, হাদিস: ১৭৭৩)। এছাড়া, হজ ও ওমরাহ দরিদ্রতা ও পাপ ধ্বংস করে, যেমন আগুন ধাতুর মরিচা দূর করে (তিরমিজি, হাদিস নং-৮১০)।

ওমরাহ শব্দের অর্থ দর্শন বা জিয়ারত করা। শরিয়তের পরিভাষায়, ইহরাম বাঁধা, কাবা শরিফের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ি করা এবং মাথা মু-ানো ওমরাহর মূল অংশ। এটি সারা বছর পালন করা যায়, তবে ৯-১৩ জিলহজ ছাড়া।

ওমরাহ একটি বিশেষ ইবাদত, যা বান্দার পাপ মোচন ও আত্মশুদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সকল পাপের কাফফারা হয়ে যায় (বুখারি, হাদিস: ১৭৭৩)।

এছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা বারবার হজ ও ওমরাহ আদায় করো, কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহকে দূর করে দেয়, যেভাবে ধাতুর জং আগুনে পুড়ে যায় (নাসায়ি, হাদিস: ২৮৮৭)।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তাই তারা আল্লাহর কাছে যা চাইবে, তিনি তা দান করবেন (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২৯৯৩)।

 

রমজানে ওমরাহ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারি নারী সাহাবিকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তুমি হজে যেতে পারোনি? তিনি বললেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র উটটি হজের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই আমি যেতে পারিনি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, রমজানে ওমরাহ করে নিও, কারণ এটি হজের সমান সওয়াব রাখে (বুখারি, হাদিস নং-১৬৯০; মুসলিম, হাদিস নং-৩০৯৭)।

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানে ওমরাহ পালনের সওয়াব সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও এটি হজের মূল ফরজ পালনের বিকল্প নয়, তবে সওয়াবের দিক থেকে হজের সমতুল্য।

রমজানে ওমরাহ পালনের উপকারিতা

দ্বিগুণ সওয়াব: রমজানে প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব বহু গুণ বৃদ্ধি করা হয়, তাই ওমরাহ পালনে বিশেষ বরকত রয়েছে।

গুনাহ মোচন: ওমরাহ বান্দার পূর্ববর্তী ছোট গুনাহসমূহ মুছে দেয়।

দারিদ্র্য দূরীকরণ: হাদিসে বলা হয়েছে, ওমরাহ অর্থনৈতিক সংকট ও অভাব মোচনে সহায়ক হয়।

আল্লাহর নৈকট্য লাভ: আল্লাহর ঘরে গিয়ে ইবাদত করার মাধ্যমে বান্দা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

রমজান মাস হলো আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ সময়। তাই, যারা সামর্থ্যবান, তারা এই মাসে ওমরাহ পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। এটি হজের বিকল্প না হলেও সওয়াবের দিক থেকে হজের সমান মর্যাদা রাখে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের বিশেষ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সূত্র:https://tinyurl.com/hrk5xmk5

আফরোজা

×