
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে মোনাজাত
সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে পবিত্র শবেবরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগি আর দোয়ার মধ্য দিয়ে এ রাত কাটিয়েছেন। শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিরা হাজির হয়েছেন। পাড়া-মহল্লায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লিরা সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগিতে কাটান।
নফল নামাজ, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করে মুসল্লিরা। ফজরের নামাজ শেষে মোনাজাতে অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সড়কে ধর্মীয় পোশাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেখা গেছে। পবিত্র শবেবরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে মাংস, হালুয়া, রুটিসহ নানান উপাদেয় খাবার তৈরির করা হয়। পরে এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এশার নামাজের পর কেউ মসজিদে কেউ বাড়িতে থেকে নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। অনেকে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করবেন।
এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শবেবরাত উপলক্ষে মাগরিবের পর থেকে ফজর পর্যন্ত নানান আয়োজন করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এসব আয়োজন করেছে।
এর মধ্যে বাদ মাগরিব পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন কারি গোলাম মোস্তফা। এরপর হামদ ও না’তে রাসুল (সা.) পরিবেশন করে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। পরবর্তী পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে শবেবরাতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। আলোচনা করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এছাড়া শবেবরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আব্দুস ছালাম খান।
এশার নামাজের পর শবেবরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে শবেবরাতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে আরও আলোচনা করেন চরমোনাই আহসানাবাদ রসিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।
এরপর ব্যক্তিগত নফল ইবাদত ও জিকিরের পর রাত আড়াইটার দিকে নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান।
আলোচনা শেষে আবারও ব্যক্তিগত নফল ইবাদত ও জিকিরের পর ফজরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী।
অপরদিকে শবেবরাত উপলক্ষে পাড়া-মহল্লার মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনও দেখা গেছে। আবার এশার নামাজ পর মসজিদে মসজিদে ইমামরা শবেবরাতের ফজিলত ও নামাজ আদায়ের নিয়মকানুনও বয়ান করেন। সারাদেশেই মসজিদগুলোতে ইবাদতের পাশাপাশি এ রাতের ফজিলত ও বিশেষত্ব নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। সেই মুক্তির রাত লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত। হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাত শুক্রবার মুক্তির রজনী হিসেবে পালন করেন মুসলিম উম্মাহ। ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরানসহ পৃৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানান ভাষায় এটি ‘শবেবরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।
পবিত্র শবেবরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবেবরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।