
ছবি: সংগৃহিত
দাজ্জাল শব্দটি আরবি "দাজলুন" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো হক ও বাতিলের সংমিশ্রণ। এটি প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার মতো নানা অর্থ বহন করে।
দাজ্জালের অন্যতম গুণবাচক নাম "মাসিহ"। এই নাম নবী ঈসা (আ.)-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়, তবে দুজনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। দাজ্জালকে "মাসিহুদ-দাজ্জাল" বলা হয়, কিন্তু ঈসা (আ.)-কে "মাসিহ আলাইহিস সালাম" বা "ঈসা আল-মাসিহ" বলা হয়।
একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দাজ্জালের একটি চোখ চ্যাপ্টা ও অকার্যকর হওয়ার কারণে তাকে "মাসিহ" বলা হয়। অন্যদিকে, ঈসা (আ.)-কে মাসিহ বলা হয়, কারণ তিনি জন্মগত অন্ধ ব্যক্তিদের চোখে হাত বুলিয়ে সুস্থ করে দিতেন। আরও একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, দাজ্জাল কল্যাণ মুছে ফেলবে, আর ঈসা (আ.) অকল্যাণ দূর করবেন।
দাজ্জাল কেয়ামতের বড় আলামতগুলোর একটি। শেষ যুগে তার আবির্ভাব হবে, যা মানবজাতির জন্য চরম পরীক্ষার সময় নিয়ে আসবে। প্রত্যেক নবী-রাসুল দাজ্জালের ফিতনা থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন, কারণ আল্লাহ তাকে কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দান করবেন যা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।
নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন মহানবী (সা.) দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রথমে তিনি দাজ্জালকে তুচ্ছ করে তুলে ধরেন, পরে গুরুত্বসহকারে ব্যাখ্যা করেন। তখন সাহাবিরা মনে করতে থাকেন যে দাজ্জাল যেন কোনো খেজুর বাগানে অবস্থান করছে। এরপর মহানবী (সা.) বলেন,
"আমি দাজ্জাল ছাড়া অন্য কিছুকে তোমাদের জন্য বেশি আতঙ্কজনক মনে করি। যদি আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকাকালে সে আবির্ভূত হয়, তবে আমি তার মোকাবিলা করব। আর যদি আমার অনুপস্থিতিতে সে আসে, তবে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিই তার সঙ্গে মোকাবিলা করবে এবং আল্লাহই মুসলমানদের তত্ত্বাবধান করবেন।" (মুসলিম: ২৯৭৩)
দাজ্জাল একচোখা হবে। তার চোখের মাঝখানে "কাফের" লেখা থাকবে, যা প্রত্যেক মুমিন পড়তে পারবে। সে নিজেকে মিথ্যা খোদা দাবি করবে। তার অনুসারীদের বেশিরভাগই ইহুদি, অনারব ও তুর্কি বংশোদ্ভূত হবে।
দাজ্জাল মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আল্লাহর অনুমতিক্রমে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটাবে। যেমন: সে এমন স্থান দিয়ে যাবে যেখানে মানুষ তাকে অস্বীকার করবে, ফলে সেখানকার ভূমি উর্বরতা হারিয়ে ফেলবে। যারা তাকে বিশ্বাস করবে, তাদের ভূমি ফল-ফসলে ভরে উঠবে।
সে জমিনের খনিজ সম্পদ বের করে ফেলবে। যাকে সে জান্নাতে পাঠাবে, প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামে যাবে, আর যাকে সে জাহান্নামে পাঠাবে, সে প্রকৃতপক্ষে জান্নাতে যাবে।
হাদিস অনুযায়ী, দাজ্জাল খোরাসান থেকে আবির্ভূত হবে এবং ইসফাহানের ইহুদিয়া অঞ্চল থেকে তার নেতৃত্ব শুরু করবে। তবে মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ সেখানকার দরজাগুলো ফেরেশতারা পাহারা দেবে।
অবশেষে, ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এই ঘটনা মুসলমানদের জন্য বিজয়ের মুহূর্ত হবে এবং শান্তির যুগের সূচনা করবে।
ইসরাত জাহান