
ছবি: সংগৃহিত
ইসলামের দাওয়াত প্রচারের কারণে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) কুরাইশদের চরম নির্যাতনের শিকার হন। তখন চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁদের ইন্তেকালের পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এই কঠিন সময়ে মহানবী (সা.) ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর আশায় মক্কা থেকে প্রায় ৭৫ মাইল দূরে তায়েফে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পালকপুত্র জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.)। তিনি আশা করেছিলেন তায়েফের লোকেরা হয়তো ইসলাম গ্রহণ করবেন। তার এমন প্রত্যাশার দুটি কারণ ছিল— তায়েফের অদূরে বনি সাকিফ গোত্রে মহানবী সা. দুধ পান করেন এবং তায়েফ সর্দারদের একজন কোরাইশ গোত্রে বিয়ে করেছিল
তায়েফে তিনি দশ দিন ধরে গোপনে ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করেন। বাজারে দাঁড়িয়ে কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। কিন্তু তায়েফের নেতারা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাধারণ মানুষকে তাঁর বিরুদ্ধে উসকে দেন।
মহানবী (সা.) তায়েফ থেকে চলে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাঁর পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়। উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা তাঁকে পাথর নিক্ষেপ করে আঘাত করে, যার ফলে তিনি রক্তাক্ত হন এবং তাঁর জুতা রক্তে ভিজে যায়। জায়িদ (রা.) তাঁকে রক্ষার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ান এবং গুরুতর আহত হন। রাসূল (সা.) যখনই বসে পড়তেন, দুর্বৃত্তরা তাঁকে জোর করে উঠিয়ে সামনে চলতে বাধ্য করত এবং আবারও পাথর নিক্ষেপ করত।
এই অত্যাচার সহ্য করে তিনি তিন মাইল দূরে একটি বাগানে আশ্রয় নেন এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, যা ‘দোয়ায়ে মুস্তাদয়িফিন’ নামে পরিচিত। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন এবং কষ্টের মুহূর্তেও তাঁর ওপর রহমত কামনা করেন।
আল্লাহ এই সময় পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠান, যারা তায়েফবাসীদের ধ্বংস করার অনুমতি চাইলে মহানবী (সা.) তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ জন্ম নেবে যারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে মানবে।’ মহানবী (সা.)-এর এই ধৈর্য, মহানুভবতা ও করুণা ইসলামের সত্যিকার সৌন্দর্য ও আদর্শের প্রতিচিত্র তুলে ধরে।
ইসরাত জাহান