
ছবি: প্রতীকী
মুসা (আ) তার অনসারীদের উদ্দেশ্য খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় তার এক অনুসারী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। বর্তমানে পথিবীতে সবচাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি কে? যেহেতু মুসা (আ) ছিলেন আল্লাহর একজন নবী এবং তিনি সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলতেন।
তিনি বললেন এই পৃথিবীতে সবচাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি আমি। তার এই কথা শুনে আল্লাহতাআলা ওহী পাঠালেন তার কাছে। আর বললেন, হে মুসা, “এই দুনিয়ায় আমার এমন এক বান্দা আছে। যে তোমার চেয়েও বেশি জ্ঞানী।”
মুসা (আ) বিনীত ভাবে আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, কে সেই ব্যক্তি? আর তার কাছ থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করতে চাইলেন। মহান আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন।
আল্লাহ বললেন, “সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে দুটি সাগর এক সাথে মিলত হয়েছে। সেখানে আর যখন মুসা (আ) দেখবেন যে তার খাবার গাঁয়েব হয়ে গেছে। তখনই বুঝে নিতে হবে যে তিনি পৌঁছে গেছেন সেই জায়গা। মুসা (আ) রওনা হলেন তার সাখে একজন অনুসারী নিয়ে। সেই ছেলের হাতে ছিল একটি ঝুঁড়ি। সেখানে একটি মাছ ছিল তাদের খাবারের জন্য। তারা হাঁটতে শুরু করলেন এবং হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গেলেন। তার অনুসারিরা বলল আর কতদূর হাঁটতে হবে।
মুসা (আ) বললেন, যতক্ষণ না আমি সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পাব। ততক্ষণ আমি হাঁটতে থাকবে। হাঁটতে হাঁটতে তার আসলেন দুই সাগরের সংযোগ স্থলে।
সেখানে মুসা (আ) বিশ্রাম নিলেন। মুসা (আ) যখন বিশ্রাম নিলেন তখন তার সাথে থাকা ছেলেটি দেখলো তাদের ঝুঁড়িতে থাকা মাছটি সাগরে নেমে গেল। আর অদৃশ্য হয়ে গেল। চোখের সামনে এমন বড় একটি ঘটনা দেখে তিনি অবাক হলেন। কিন্তু মুসা (আ) ঘুমিয়ে থাকার কারনে তিনি ডাকলেন না। মুসা (আ) ঘুম থেকে উঠার পর তিনি ঘটনাটা ভুলে গেলেন। তারা আবার হাঁটতে লাগলেন এবং বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর মুসা (আ) খাবার চাইলেন। তখন তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলার পর তিনি বললেন।
শয়তান তাকে সব কিছু ভূলিয়ে দিয়েছেন। এরপর তারা ফিরে গেলেন সেই জায়গা। গিয়ে তাদের সাথে দেখা হলো আল খিদরের। আল খিদর তার নাম নয়। মহানবী (সা) বলেন, তাকে এই নামে ডাকা হয়। কারণ সে যেখানে যায় সেখানে সবুজ হয়ে যায়। আল খিদর অর্থ সবুজ। আমি আপানার সাথে থাকতে চাই। জ্ঞান অর্জন করতে চাই। আল খিদর তাকে অনুমোতি দিলেন কিন্তু একটা শর্ত জুড়ে দিলেন।
মুসা (আ) প্রশ্ন করতে পারবেন না। শুধু যতটুকু তিনি নিজক থেকৈ জানান ততটুকু। এই শর্তে রাজি হয়ে মুসা (আ) যাত্রা শুরু করলেন। তারা নদী পার হওয়ার জন্য এক জাহাজে উঠলেন।
জাহাজটি ছিল গরীব এক দল জেলের। তারা বিনা পয়সায় তাদের নদী পার করে দিতে বললেন। জলেরা যখন নিজেদের কাজে ব্যস্ত ছিল। তখন খিদর একটা কুড়াল নিয়ে জাহাজের নিচের অংশ ভেঙ্গে দিলেন। ফলে জাহাজে পানি উঠা শুরু করলো। তারা কিনারায় পৌঁছে নেমে গেলেন। তখন মুসা (আ) অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা আমাদের উপকার করলেন। আর আপনি তাদের এমন করলেন। তখন তিনি বললেন, আপনি প্রশ্ন কেন করলেন? মুসা (আ) তার সেই শর্তের কথা মনে পড়লো। তিনি ক্ষমা চাইলেন।
আর ওয়াদা করলেন যে তিনি আর কোন প্রশ্ন করবেন না। কিছু এগিয়ে তিনি দেখলেন যে কিছু ছেলে মেয়ে খেলা করছে। তার মধ্যে থেকে তিনি একটা ছেলেকে মাটিতে ফেলে দিয়ে হত্যা করলেন। মুসা (আ) ছিলেন আল্লাহর অলি। তার চোখের সামনে এমন ঘটনা তাকে ব্যথিত করেছে এবং তিনি এর প্রতিবাদ করলেন। আল খিদর তাকে আবার তার শর্তের কথা মনে করিয়ে দিলেন। মুসা (আ) আবার ক্ষমা চাইলেন। তারা আবার হাঁটতে লাগলেন এবং এক শহরে পৌঁছলেন। তারা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের কেউ খাবার ও পানি দিলনা।
তারা যখন শহর থেকে বের হলেন এবং দেখলেন একটা ভাঙ্গা দেয়াল। আল খিদর কাউকে কিছু না বলেন মেরামত করা শুরু করলেন এবং তিনি যখন সেই দেয়াল মেরামত করলেন। তখন মুসা (আ) আর চুপ থাকতে পারলেন না। তিনি বললেন এই শহরের মানুষ আমাদের একটু পানিও দেন । কিন্তু আপনি কেন দেওয়াল করে দিলেন। আর এটি নির্মাণের বিনিময়ে আপনি কিছু চাইতে পারতেন। মুসা (আ) বললেন, আপনার আর আমার যাত্রা এখানেই শেষ। এটা আপনার শেষ সুযোগ ছিল। আপনি ধৈর্য্য করতে পারেন নাই। সুতরাং আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়। কিন্তু যাওয়ার আগে আমি আপনাকে বলি আমি সেই তিনটি কাজ কেন করেছি।
প্রথমত, আমি সেই গরীব জেলেদের জাহাজ কেন ভেঙেছি। কারন এক অত্যাচারি রাজা সেখানে ছিল। তারা আশে পাশের সব নিখুঁত নৌকা নিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু কোন টাকা দিচ্ছিলো না। দ্বিতীয়ত, আমি ছেলেটিকে মেরে ফেলেছি। তারা বাবা-মা পহেজগার মানুষ। সেই শিশুটি বড় হয়ে তার বাবা মাকে অসম্মানিত করবে। তৃতীয়, আমি দেয়াল নির্মাণ করেছি। কারন এখানে এতিমের ধন সম্পদ জমা আছে। দেয়াল না দিলে শাহরের সব লোক এই সম্পদ দখল করবে।
কাজেই মুসা (আ) ও আল খিদরের গল্প থেকে আমরা এটাই নিতে পারি যে, আল্লাহ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। আমরা সাময়িক মন্দ মনে করলেও আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
শহীদ