
ছবি : সংগৃহীত
রাসুলুল্লাহ (সা:) তার প্রত্যেকটি উম্মত কে তালবিনা খেতে বলেছেন, সুনানে ইবনে মাজাহর ৩৪৪৫ নম্বর হাদিসে তিনি বলেন, “তোমরা যেমন পানি দ্বারা মুখমন্ডলের ময়লা পরিস্কার করে ফেলো, ঠিক একই ভাবে অন্তরের অবসাদ এবং বিষন্নতাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করার জন্য তালবিনা খাও।”
বর্তমানে বিজ্ঞান গবেষণা করে দেখেছে, তালবিনা খেলে মানুষের ডিপ্রেশন অর্থাৎ দুশ্চিন্তা, হতাশা, অবসাদ, বিষণ্ণতা দূর হয়।
তালবিনা হার্টের রোগী এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এটি রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়া মানুষের পিত্তথলির পাথর রোধেও ভুমিকা রাখে তালবিনা। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস যা অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোধেও সাহায্য করে। তালবিনা খেলে পেটের জ্বালাপোড়া দূর হয়। বিশেষ করে মাহে রমজানে ইফতার এবং সেহরিতে তালবিনা খুব পুষ্টিকর একটা খাবার।
এছাড়াও বছরের যেকোনো সময় তালবিনা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। প্রোস্টেট নালীর প্রদাহ হ্রাস করে। কিডনি রোগীদের জন্য এটা উপকারী। অসুস্থ, দুর্বল রোগীদের জন্য শক্তিদায়ক একটি খাবার হচ্ছে তালবিনা। এছাড়াও যেকোনো মানুষই খেতে পারে তালবিনা। বিশেষ করে শিশুদের প্রয়োজনীয় আশঁ, আমিষ ও খনিজ পদার্থ এর যোগান দেয় তালবিনা।
রাসুলুল্লাহ (সা:) আরো বলেছন, “তোমাদের কাছে ভালো না লাগলেও তোমরা অবশ্যই তালবিনা গ্রহণ করবে, এবং সে সময় মুসলিম পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে, পাতিলের মধ্যে সব সময় তালবিনা রান্না করা থাকতো। যতক্ষণ না পর্যন্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠতো কিংবা মারা যেত।” ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৪৪৬)
মাহে রমজানে ইফতারির টেবিলে এই খাবারটি আমাদের সারাদিনের পুষ্টি ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটেও এই খাবারটি খেলে দ্বিগুণ উপকার পাওয়া যায়। তাই এটি মাহে রমজানে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, এছাড়াও একজন মুসলিমের জন্য ১২ মাসই খাবারটি একটি শ্রেষ্ঠ খাবার।
তালবিনা বানানোর প্রক্রিয়া:
এটি বানাতে যা যা লাগবে,
এক নম্বর হচ্ছে ১০০ গ্রাম বার্লি, ১ লিটার দুধ, এলাচ গুড়াঁ অথবা দুই থেকে তিনটা এলাচকে বাটায় পিষে নিতে হবে। এছাড়াও কাজু বাদামকে পিষিয়ে দুই টেবিল চামচের মতো লাগবে।পেষানো পেস্তাবাদামও এক থেকে দুই টেবিল চামচ। খেজুর লাগবে ১০-১৫ টি।
বার্লিকে ভালো করে ধুয়ে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। যখন বার্লিটা ভিজানো হয়ে যাবে এবং কিছুটা ফুলে উঠবে, তখন এই ভেজানো ফোলা বার্লিটা একটা পাত্রে দুধের সাথে মিশিয়ে জাল দিতে থাকুন।
৮-১০ মিনিট অল্প আচেঁ রান্না করুন। এসময় পাত্রটি সামান্য ফাঁকা রেখে ঢেকে দিন। এবার ১০-১৫ টি খেজুর কুচি কুচি করে কেটে নিতে পারেন। আপনি চাইলে ব্লেন্ডার করে নিতে পারেন। অথবা কুচি করা খেজুরগুলো এর সাথে মিশিয়ে আরো ২৫-৩০ মিনিট রান্না করুন। এসময় পাত্রটি সামান্য ফাঁকা রেখে দিন।
এবার দুধে এলাচির গুড়া আধা চা চামচ মিশিয়ে ৮-১০মিনিট রান্না করুন। সর্বশেষ কাজু ও পেস্তা বাদামের কুচি গুলো ওপরে মিশিয়ে দিন। ২ মিনিট ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে তারপর পরিবেশন করুন।
আপনারা চুলা থেকে উঠিয়ে নেওয়ার পরেও চাইলে কিছুটা কাজু বাদাম ও পেস্তা বাদাম এর গুঁড়া উপরে ছিটিয়ে দিতে পারেন এবং এর পাশাপাশি কিছুটা মধু যুক্ত করতে পারেন।
মিষ্টির পরিমাণ কম হলে, বাড়তি খেজুর যোগ করে নিবেন। আশা করি, আপনারা সকলেই এই সুন্নতি খাবারটা বাসায় নিজেদের হাতে তৈরি করে নিতে পারবেন।
মো. মহিউদ্দিন