![শবে বরাত: রহমত,মাগফিরাত ও মুক্তির এক আলোকময় রজনী শবে বরাত: রহমত,মাগফিরাত ও মুক্তির এক আলোকময় রজনী](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/3-6-2502131344.jpg)
সংগৃহীত
শবে বরাত, অর্থাৎ মুক্তির রাত। ইসলামের এক মহিমান্বিত রজনী, যা শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত উদযাপন করা হয়। এটি এমন এক রাত, যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, রহমতের বৃষ্টি ঝরে পড়ে, আর আল্লাহ তাআলা অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
এই রাতের আভায় মুমিন হৃদয় আলোকিত হয়, পাপমোচনের আশায় দোয়ায় মশগুল হয়, আর আত্মশুদ্ধির এক নতুন যাত্রা শুরু হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, এই রাতেই পরবর্তী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। যারা অনুতপ্ত মনে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, তারা পান অফুরন্ত করুণা ও রহমতের স্পর্শ। এটি কেবলমাত্র ইবাদতের রাত নয়, বরং এটি আত্মপরিশুদ্ধি ও নতুন করে শুরু করার এক মোক্ষম সুযোগ।
এই বরকতময় রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-
“নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাতে কুরআন নাজিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়।”
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক মুফাসসিরগণ বলেন, শবেবরাতেই আগামী বছরের তাকদির নির্ধারণ করা হয়- কে জীবিত থাকবে, কে মৃত্যুবরণ করবে, কার রিজিক কেমন হবে। এই রাত হলো ক্ষমার, ভাগ্যলিপি নির্ধারণের এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের এক বিস্ময়কর সুযোগ।
হাদিসের আলোকে শবেবরাতের ফজিলত ও বিশেষত্ব
হাদিসেও এই রাতের বিশেষত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
"যখন শাবানের মধ্যরাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করেন: ‘কে আছো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। কে আছো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব।’ এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ঘোষণা চলতে থাকে।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)
এ রাতের রহমত থেকে বঞ্চিত হন শুধু তারা, যারা মুশরিক, বিদ্বেষ পোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, অহংকারী ও মদ্যপানে লিপ্ত থাকে। যারা আল্লাহর দরবারে নত হয়ে নিজেদের সংশোধন করে, তারা পান অফুরন্ত দয়া ও করুণার সন্ধান।
শবেবরাতের প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে এর ইবাদত-বন্দেগিতে। এ রাতে যারা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় জেগে থাকেন, তারা মহান রবের অশেষ রহমত ও মাগফিরাত লাভ করেন। অনেকে রাতব্যাপী নামাজে দাঁড়িয়ে নিজেদের পাপমোচনের প্রার্থনা করেন, আবার কেউ কুরআন তেলাওয়াত করে হৃদয় প্রশান্ত করেন। একাকী আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে গুনাহের বোঝা লাঘব করতে চাইলে, এই রাতের কোনো তুলনা নেই।
এই রজনী শুধু ইবাদতের রাত নয়, এটি আত্মশুদ্ধিরও এক মোক্ষম সুযোগ। যারা অনুতপ্ত মনে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে চান, তাদের জন্য এটি এক বিশেষ অনুগ্রহের মুহূর্ত। মহান আল্লাহ পাক বলেন-"আমি তাদের জন্য ক্ষমাশীল, যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে।"
শবে বরাতের মূল শিক্ষা হলো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমার জন্য অপেক্ষা করেন। তাই আসুন, আমরা এই মহিমান্বিত রাতে নিজেদের পরিশুদ্ধ করি, আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের আশায় দোয়া করি, এবং ইহকাল ও পরকালের সফলতার পথে নিজেদের পরিচালিত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং তাঁর অনুগ্রহে ধন্য করুন। আমিন!
আফরোজা