ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বলা হয়েছিল আলোক বিজ্ঞানের রহস্য

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বলা হয়েছিল আলোক বিজ্ঞানের রহস্য

ছবি: সংগৃহীত

আলো এমন এক রহস্যময় শক্তি যা যুগে যুগে মানবজাতিকে মুগ্ধ করেছে। এটি পৃথিবীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেটি ছাড়া আমরা দৈনন্দিন জীবন কল্পনাও করতে পারি না। দিনে কিংবা রাতে, ঘরে অথবা বাইরে, পড়ালেখা বা খেলাধূলা, মসজিদ কিংবা মাদ্রাসা সবখানেই আলো প্রয়োজন। কিন্তু আলোর গভীর রহস্যের কথা কি বমরা কখনো চিন্তা করেছি? আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীরা যখন আলোর বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন তারা  এর গতিপ্রকৃতি বের করতে সমর্থ হন। কিন্তু আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই কুরআনে বর্ণিত হয়েছে আলোর তত্ত্ব।

আলো এক ধরনের শক্তি বা বাহ্যিক কারণ, যা চোখে প্রবেশ করে দর্শনের অনুভূতি জন্মায়। আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে, কিন্তু এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা আলোকে দেখতে পাই না, কিন্তু আলোকিত বস্তুকে দেখি।

দীপ্তমান বস্তু থেকে আলো কীভাবে আমাদের চোখে আসে তা ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত চারটি তত্ত্ব প্রদান করেছেন। যথা- ১. স্যার আইজ্যাক নিউটনের কণা তত্ত্ব (Corpuscular Theory) ২. বিজ্ঞানী হাইগেন এর তরঙ্গ তত্ত্ব (Wave Theory) ৩. ম্যাক্সওয়েলের তড়িতচৌম্বক তত্ত্ব (Electromagnetic Theory) ৪. ম্যাক্স প্লাঙ্ক এর কোয়ান্টাম তত্ত্ব (Quantum Theory) ১৯০৫ সালে আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাহায্যে আইন্সটাইন এ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন, সেজন্য তাকে ১৯২১ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিজ্ঞানীরা ১৯ শতকে আলো নিয়ে কিছু থিওরি উদ্ঘাটন করলেও এর মৌলিক তত্ত্ব দেড় হাজার বছর আগে দিয়ে রাখা হয়েছিল পবিত্র কুরআনে। এই গ্রন্থে আলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এমনকি নূর বা আলো নামে একটি সুরাই নাযিল করা হয়েছে। এই সূরায় আল্লাহ নিজেকে নূর হিসেবে উল্লেখ করে আসমান ও জমিনের আলোর উৎস হিসেবে ঘোষণা করেন। 

পবিত্র কুরআনে সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ”আল্লাহ আসমান ও যমীনের আলো, তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হল যেন একটি তাক- যার ভিতরে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি হচ্ছে কাঁচের ভিতরে, কাঁচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা প্রজ্জ্বলিত করা হয় বরকতময় যায়তুন গাছের তেল দ্বারা যা পূর্বদেশীয়ও নয়, আর পশ্চিমদেশীয়ও নয়। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও তার তেল যেন উজ্জ্বলের বেশ নিকটবর্তী, আলোর উপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন স্বীয় আলোর দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেন, আল্লাহ সর্ববিষয়ে অধিক জ্ঞাত।

এই আয়াতে আল্লাহর নূরকে একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করে শুধু স্রষ্টার আধ্যাত্মিক আলোর কথা বলা হয়নি। বরং গভীর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের কথা বলা হয়েছে। নূর শব্দটি দ্বারা এমন অসীম ও বিশুদ্ধ আলোর কথা বলা হয়েছে যা সর্বত্র বিরাজমান। ফোটন বা আলোর কণাও সেরকম, অদুশ্য কিন্তু প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে থাকে। এছাড়াও এই আয়াতে আলোর প্রকৃতি সম্পর্কেও গভীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে যা বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়।আজকের অপটিকস বা আলেক বিজ্ঞানে আলেকে কণা হিসেবে ধরা হয় যা ফোটন নামে পরিচিত। ফোটেনের কোনো স্থায়ী ভর না থাকলেও এই কণা আলোর শক্তিকে ধারণ করে এবং পারিবহন করে।এই পরিবহনের গতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। তবে ফোটনের শক্তি নির্ভর করে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর।

এমনকি কোরআনে আলোর গুণগত মানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইউনূসের ৪ নং আয়াতে বলেন, “তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।”

ইসরাত জাহান

×