ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

কোরআনে বর্ণিত ডেভিল কারা?

বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কোরআনে বর্ণিত ডেভিল কারা?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলায় বহুল প্রচলিত ‘শয়তান’ মূলত আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সীমালঙ্ঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারী। ইংরেজিতে এর প্রতিশব্দ ডেভিল। পবিত্র কোরআনে শয়তান শব্দটি সর্বপ্রথম আদি জিন বা জিনদের আদি পিতা ইবলিসের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে প্রথম মানুষ হজতর আদম (আ.)-এর সামনে সিজদাবনত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এরপর থেকে পরিভাষায় ইসলিসের বৈশিষ্ট্যের জিন ও মানুষ উভয়ের জন্যই শয়তান শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আরবিতে শয়তান শব্দের বহুবচন ‘শায়াত্বিন’। কোরআনে কারিমে শয়তান শব্দ একবচন ও বহুবচনে অন্তত ৮৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে। কোরআনের বর্ণনা মতে- মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় শয়তান ও ডেভিল হচ্ছে- ইসলামের বিরুদ্ধাচারী নেতারা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন তাদের শয়তানদের (নেতারা) সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী’।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪)

কোরআন মুমিনদের আল্লাহর বন্ধু আখ্যা দিয়েছে। পক্ষান্তরে, যারা আল্লাহর হুকুমের বাইরে তাদের নেতা ও শয়তানের অনুসরণ করে, তাদেরকে আখ্যায়িত করেছে শয়তানের বন্ধু হিসেবে। শয়তানের বন্ধুদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু (বা অভিভাবক)। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। আর যারা অবিশ্বাস করেছে, শয়তান তাদের বন্ধু (ও পৃষ্ঠপোষক) সে তাদের আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, আর তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৭)

অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তুমি কোরআন তিলাওয়াত করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে আর তাদের প্রতিপালকের ওপর ভরসা করে, তাদের ওপর তার (শয়তানের) কোনো কর্তৃত্ব নেই। তার কর্তৃত্ব শুধু তাদের ওপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে আর যারা তাঁর (আল্লাহর) সঙ্গে শরিক করে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৮-১০০)

শয়তান তার অনুসারী ও বন্ধুদের কখনো ভালোর পথ দেখায় না; বরং তাদেরকে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত করাই তার লক্ষ্য। দূর থেকেও শয়তান নানাভাবে তার অনুসারী ও বন্ধুদের উসকানি ও কুমন্ত্রণা দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, ইবলিস (শয়তান) সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত, যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে...।’ (সহিহ মুসলিম : হাদিস-২৮১৩) একই সঙ্গে এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তানরা নিজেদের সঙ্গী-সাথিদের মনে এমন কুমন্ত্রণা প্রবেশ করিয়ে দেয়, যাতে তারা তোমাদের সঙ্গে ঝগড়া ও বিতর্ক করে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২১)

এজন্য আমাদের উচিৎ বন্ধু গ্রহণ ও নেতা বানানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা এবং অসৎ কাউকে অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকা। কারণ শয়তানকে বন্ধু বানানোর পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে অভিভাবক (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করবে, সে স্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পতিত হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৯) 
 

শিহাব

×