![পবিত্র শব-ই-বরাত, অনুতপ্ত হৃদয়ের মাগফিরাতের রাত পবিত্র শব-ই-বরাত, অনুতপ্ত হৃদয়ের মাগফিরাতের রাত](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/WhatsApp-Image-2025-02-10-at-72320-PM-1-2502101331.jpg)
ছবিঃ সংগৃহীত
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয় শবে বরাত। ফারসি থেকে আগত এই শব্দের অর্থ হলো "মুক্তির রজনী"। আরবি ভাষায় একে "লাইলাতুল বারকাত" বলা হয়, যার অর্থ "বরকতময় রাত"। হাদিস শরিফে একে "নিসফ শাবান" বা "শাবান মাসের মধ্যরজনী" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রাতকে শবে বরাত নামেই বেশি চেনে মুসলিম সমাজ।
শবে বরাতের মাহাত্ম্য
ইসলামের বিশেষ রজনীগুলোর মধ্যে পাঁচটি রাতের গুরুত্ব সর্বাধিক— শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর এবং দুই ঈদের রাত। এই রাতগুলোর মধ্যে শবে বরাত একটি, যা মুসলিমদের কাছে গুনাহ থেকে মুক্তির ও আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম সুযোগ।
কুরআনের দৃষ্টিতে শবে বরাত:
আল্লাহ তাআলা বলেন, "হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়।"
(সূরা দুখান: ১-৪)
কিছু তাফসিরবিদদের মতে, এখানে "বরকতময় রজনী" বলতে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। তাফসির গ্রন্থ রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান-এও এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
হাদিসের আলোকে শবে বরাতের ফজিলত
১. আল্লাহর ক্ষমার রাত
হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, "একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সময় সেজদায় অবস্থান করলেন। আমি ভাবলাম, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। পরে আমি তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তখন তিনি নড়লেন এবং সেজদা শেষ করে বললেন, ‘হে আয়িশা! তুমি কি জানো, আজ কোন রাত?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন তিনি বললেন, ‘এটি শাবান মাসের মধ্যরজনী, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন এবং বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’"
(শুআবুল ঈমান, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৮২)
২. জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দোয়া
এ রাতের ফজিলত বোঝাতে হজরত আয়িশা (রা.) আরও বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সা.) এ রাতে মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করতেন এবং ইস্তিগফার করতেন।"
(তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)
শবে বরাতের করণীয়:
১. নফল নামাজ আদায় করা
২. নফল রোজা রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যখন শাবানের মধ্যরজনী আসে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো।"
(সুনানে ইবনে মাজাহ)
শবে বরাতের পরের দিন (১৫ শাবান) রোজা রাখা উত্তম। এছাড়া, মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের সুন্নত নফল রোজাও রাখা যেতে পারে।
৩. দোয়া ও ইস্তিগফার করা
নিজের, পরিবার ও মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা
কবর জিয়ারত করে মৃতদের জন্য মাগফিরাত কামনা করা
শবে বরাতে বর্জনীয় কাজ:
আতশবাজি ও পটকা ফোটানো
অনর্থক আনন্দ-উল্লাস ও ঘোরাফেরা করা
ইবাদতের পরিবর্তে খাবারদাবারে বেশি মনোযোগ দেওয়া
অন্যের ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটানো
শবে বরাত ও হালুয়া-রুটির প্রচলন
শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটি খাওয়ার একটি ঐতিহ্য রয়েছে। হালুয়া আরবি শব্দ, যার অর্থ মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন এবং সাদাকাহ ও দান করাকে উৎসাহ দিতেন। তবে এই রাতকে কেবল খাবারের সাথে সংযুক্ত করে ইবাদত থেকে গাফিল হওয়া ঠিক নয়।
শবে বরাত এক মহিমান্বিত রাত, যেখানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন। তাই এ রাতকে যথাযথভাবে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো উচিত এবং অহেতুক আনন্দ-উল্লাস বা বিদআত এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
আসিফ