ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রশ্নে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রশ্নে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

সমতা প্রতিষ্ঠার নামে নারীকে পুরুষের সমান করে তোলার দাবির অসারতা নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও সমাজসেবক শায়খ আহমাদুল্লাহ। 

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি বলেন, নারীকে অর্থনৈতিকভাবে পুরুষের সমান করে তোলার এই ধারণা পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা। যেখানে পরিবার-ব্যবস্থা নেই। যেখানে নারী-পুরুষ আলাদাভাবে বসবাস করে। যেখানে নারী-পুরুষ উভয়কেই আলাদাভাবে উপার্জন করতে হয়। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে পুরুষ উপার্জন করে আর নারী ভেতরটা আগলায়। এটা শুধু আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়, এটা পুরো উপমহাদেশের সংস্কৃতি। এমনকি সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই চলে আসছে এই ব্যবস্থাপনা।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম যে উত্তরাধিকার আইন দিয়েছে, তাতে নারী বাবার সম্পত্তিতে পুরুষের কম অংশ পেলেও ব্যয়ের দিক থেকে নারী অধিক সুবিধা ভোগ করেন। কারণ, সংসারের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব তার নয়। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, সকল পুরুষ তো সাধু নয়। নারীর অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগে অনেক পুরুষ স্ত্রীর ওপর জুলুম করে। তাই নারীকে পুরুষের সমান ভাগ দেয়া উচিত। যেন সে দুর্দিনে ভালো থাকতে পারে। কিন্তু কথা হলো- উত্তরাধিকার আইন সমান করলেই যে নারী জুলুম থেকে মুক্তি পাবে, ব্যাপার এমন নয়।’

‘তাছাড়া, ইসলাম নারীর জন্য শুধু ইসলাম নারীর জন্য শুধু বাবার সম্পদেই অংশ রাখেনি। বরং, বাবা, মা, স্বামী, সন্তানের সম্পদেও রয়েছে নারীর অংশ। পাশাপাশি তাদের জন্য রয়েছে মোহরের ব্যবস্থা। কোনো নারী যদি স্বামী-কর্তৃক নিগ্রহের শিকার হনও, তবে আশা করা যায়, মোহরসহ সম্পদের অন্যান্য অংশ দ্বারা তিনি আত্মনির্ভরশীল হতে পারবেন, অত্যাচারী স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। ‘মূল বিষয় হলো, ইসলাম উত্তরাধিকার আইনে নারীর যে অংশগুলো দিয়েছে, প্রত্যেক নারীকে সেটা পাওয়ার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। তবেই মিলবে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি। তবেই ঘুচবে নারীর দুর্দিন। ’

‘আর এই কাজটাই বহুকাল ধরে করে আসছেন এদেশের আলেম-ইমামগণ। তারা নিঃস্বার্থভাবে মাহফিলে-মিম্বরে নারীর মিরাসের হক বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন করে আসছেন। আজ এ বিষয়ে সমাজের বুকে সামান্য হলেও যে ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখছি, তা এই সকল নিষ্ঠাবান আলেমদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল।’

নারীবাদীদের দাবি মানা হলে যা হবে তার একটি চিত্র তুলে ধরে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের এই চরম অবক্ষয়ের সময়ে তথাকথিত নারীবাদীদের দাবি মানলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এতে পুরুষের ব্যয়ের হাত সংকুচিত হবে আর নারী হয়ে উঠবে স্বেচ্ছাচারী। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বের মতো সংসার ও পরিবারহীন এক সমাজব্যবস্থার মুখোমুখি হব আমরা।’

‘যেখানে নারী-পুরুষ থাকবে, কিন্তু সংসার থাকবে না। যেখানে পরিণত বয়সের মানুষ থাকবে, কিন্তু নতুন শিশুর জন্ম কমে যাবে। একটা জাতির জন্য এটা যে কতবড় অভিশাপের বিষয়, পূর্ব-পশ্চিমের সকল সচেতন মানুষ তা হাড়েহাড়ে উপলব্ধি করছেন। যেখানে সরকারি প্রণোদনা দিয়েও শিশু-জন্মের হার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’

‘পশ্চিমারা নারী-পুরুষের সমতা চায় আর ইসলাম চায় নারী-পুরুষের ন্যায্যতা। সমতা সব সময় ইনসাফ নিশ্চিত করে না। কিন্তু ন্যায্যতা ইনসাফ নিশ্চিত করে। একই পরিবারে যদি ভিন্ন বয়সী দুটি ছেলে থাকে, উভয়কে একই মাপের জামা কিনে দেয়া হলো সমতা। কিন্তু দুজনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাপের পোশাক কেনা হলো ন্যায্যতা। উত্তরাধিকার আইনে ইসলাম মানুষের জন্য এই ন্যায্যতাকেই নিশ্চিত করেছে।’

‘মহান আল্লাহ পরম মমতা দিয়ে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তরাধিকার আইনটিও তিনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এর মাঝেই রয়েছে আমাদের জন্য কল্যাণ। আমরা যদি আল্লাহর নিয়ম ভেঙে নিজেদের নিয়ম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি, তাতে সমাজের বুকে সৃষ্টি হবে চরম বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলা সামলানোর সাধ্য আমাদের কারো থাকবে না।’

সজিব

×