ছবি: সংগৃহীত।
রমজান মাসে ইবাদতের প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোনো কাজই পরিকল্পনা ছাড়া সুচারুভাবে সম্পন্ন হয় না। রসুলুল্লাহ (স.) নামাজ ও হজের মতো পবিত্র রমজানের জন্যও বিশেষ প্রস্তুতি নিতেন এবং উম্মতকে রমজানের ইবাদতের জন্য আগাম প্রস্তুত হতে বলতেন। নিম্নে রমজানকে স্বাগত জানানো ও প্রস্তুতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলের কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো :
এক. মহানবী (সা.) এই বরকতময় মাসটিকে আহলান সাহলান বলে স্বাগত জানাতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে তিনবার এই প্রশ্ন করতেন: কে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছে এবং তোমরা কাকে স্বাগত জানাচ্ছ? উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেউ কি ওহি নিয়ে আসছেন? তিনি বলেন, না। প্রশ্ন করা হলো, শত্রুর সঙ্গে কি যুদ্ধ হবে? মহানবী (সা.) বলেন, না।
পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রথম রাতে সব কিবলাবাসীকে ক্ষমা করে দেন। (আত-তারগিব ওয়া আত-তারহিব, হাদিস : ১৫০২)
দুই. আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রজবের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন—হে আল্লাহ! রজব, শাবান আর (বিশেষ করে) রমজান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করে দিন। (হিলয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬৯)
তিন. উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম—হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি শাবান মাসে যতটা রোজা রাখেন, অন্য কোনো মাসে আপনাকে রোজা রাখতে দেখিনি? নবী (সা.) বলেছেন, এটি এমন একটি মাস যা রজব ও রমজানের মাঝামাঝি আর লোকেরা একে অবহেলা করে ও উদাসীন থাকে। অথচ এই মাসে (পুরো বছরের) আমল আল্লাহ তাআলার সামনে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই আমার আমল রোজা অবস্থায় উঠুক। (নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)
চার. উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে টানা দুই মাস রোজা রাখতে দেখেননি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে টানা রোজা রাখতেন, যাতে তিনি রমজান মাসে রোজা রাখতে পারেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২১৭৫)
এভাবে, আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণ প্রস্তুতি ও ভক্তি নিয়ে রমজান মাসের আগেই শাবান মাসে রোজা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, শাবান হলো রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস, সুতরাং এ মাসে একই আমল করা উচিত, যা রমজান মাসে প্রচুর পরিমাণে করা হয়—যেমন রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত। শাবান মাসে বেশি রোজা ও তিলাওয়াতের গুরুত্বারোপ করা হয় যাতে রমজান মাসের বরকত গ্রহণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়া যায়। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২৫৮)
নুসরাত