ছবি : সংগৃহীত
যদি বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন এক গুপ্ত সংগঠনের মর্জিমাফিক নির্বাচিত হয়েছেন, অবাক হবেন নিশ্চয়ই। এর আগে জর্জ বুশ, বারাক ওবামা আর জো বাইডেনের মত প্রভাবশালী নেতারাও যে ওই অদৃশ্য সংগঠনের হাতের ইশারায় তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন, এতেও তো অবাক না হয়ে পারবেন না।
শুধু কি রাজনীতিবিদ, বিশ্বের বড় বড় ধনকুবের, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় আর নামিদামি সব তারকারাও উঠবস করেন এই সংগঠনের কথায়।
মাত্র পাঁচজন সদস্য নিয়ে যে সংগঠন একান্ত নীরবে নিভৃতে যাত্রা শুরু করেছিল। বিশ্বের প্রতিটি কোনায় কোনায় আজ তাদের এমন সব অনুসারী যারা নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো বিশ্ব।
২০১২ সালে নির্মিত এই কানাডিয়ান ফিল্মে দেখানো হয়েছে কিভাবে এই গোষ্ঠী জর্জ ডব্লিউ বুশ আর বারাক ওবামাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কিভাবে তাদের ষড়যন্ত্রে টুইন টাওয়ার ধসে পড়েছে।
কি সেই গুপ্ত সংগঠন? কে বা কারা এর প্রতিষ্ঠাতা আর সদস্য এবং কি বা তাদের কাজ?
বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করি, এতক্ষণ যে গুপ্ত সংঘের কথা বলছিলাম তার নাম ইলুমিনাতি। ১৭৭৬ সালের পহেলা মে জার্মানির বাভারিয়াতে অ্যাডাম ভাইস হাউড সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি ইঙ্গলিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথলিক চার্চ আইন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। অ্যাডাম তার চারজন ছাত্রকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রার সময় নাম রাখেন বুন্ট ডা পের্ফেক্টিবিলিস্টেন। কিন্তু নামটি বেশ অদ্ভুত হওয়ায় ১৭৭৮ সালের এপ্রিল মাসে নতুন নাম রাখেন ইলুমিনাতি।
প্রথম দিকের লক্ষ্য ছিল কুসংস্কার, অস্পষ্টতা, জনজীবনে ধর্মীয় প্রভাব এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরোধিতা করা। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে, সারা বিশ্বে এক শাসন ব্যবস্থা, সারা বিশ্বে একজন নেতা, সারা বিশ্বের এক সরকার, সারা বিশ্বের এক মুদ্রা এবং সারা বিশ্বের এক ধর্ম।
তারা তাদের সাধারণ বিধিতে লিখেছিল, অন্যায়ের প্রবর্তকদের ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটানো। তাদের উপর কর্তৃত্ব না করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু সমাজ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ ভেবে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ বাভারিয়ার তৎকালীন শাসক চার্লস থিওডর তার শাসিত অঞ্চলের সকল গুপ্ত সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৭৮৫ সালের ২ মার্চ এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। অ্যাডাম পালিয়ে যান আর ইলুমিনাতির প্রচুর গোপন নথিপত্র সরকারের হাতে এসে যায় এবং দু বছর বাদে সরকার সেগুলো প্রকাশ করে দেয়। বিশ্ব প্রথম জানতে পারে ইলুমিনাতির গভীর ষড়যন্ত্রের কথা।
ইলুমিনাতির প্রতীক হিসেবে প্রথমে প্যাঁচাকে বেছে নেয়া হয়। এছাড়াও পিরামিড, এক চোখ, রক সাইন এসব কিছুই ইলুমিনাতির প্রতীক। এক চোখ বলতে এখানে দাজ্জালকে বোঝানো হয়েছে। কারণ দাজ্জালের অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত প্রহর গুনছে তারা। এর জন্যই সকলে অপলক নেত্রে চেয়ে আছে পিরামিড আকৃতির ত্রিভুজের দিকে।
আমরা সবাই জানি, দাজ্জাল পৃথিবীতে আসবে। কেয়ামতের আগে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফেতনা হবে দাজ্জাল। মুসলিম জাতি যেন বিনা সংকচে দাজ্জালের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেয়, এটাও তাদের অন্যতম এক এজেন্ডা।
আবার অনেকের মতে, তারা বিশেষ এক দর্শনে বিশ্বাসী এবং সমাজে সেই দর্শন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ধারণা করা হয়, বিশ্বের সকল প্রধান ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছে তারাই। যেমন ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের সূচনা, নেপোলিয়নের ওয়াটারু যুদ্ধের ফলাফল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কেনেডির গুপ্ত হত্যা।
হাল আমলেও পুরো হলিউড ইন্ডাস্ট্রি আর বিশ্বের সুপার পাওয়ার গোষ্ঠী ইলুমিনাতির দখলে। মাইকেল জ্যাকসন থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জুলি, বিল গেটস থেকে লিওনেল মেসি, ভ্লাদিমির পুতিন থেকে নরেন্দ্র মোদি কে নেই এই তালিকায়।
কেটি পেরি, জাস্টিন বিবার, মাইলি সাইরাস, ব্রিটনি স্পিয়ারস, লেডি গাগা, কানিয়ে ওয়েস্ট, এমিনেম রিয়ানা আর জেজির মত সুপারস্টাররা তাদের গানে ইলুমিনাতির বিভিন্ন সিম্বল গুলো হরহামেশায় ব্যবহার করেন। আরেক তারকা মেরোনা তো আরো এক ধাপ এগিয়ে। ইলুমিনাতি শিরোনামে তিনি মিউজিক ভিডিওই বের করেছেন। এসবের মাধ্যমে ইলুমিনাতি আপনার অবচেতন মনে তাদের বিশ্বাসগুলো ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
আধুনিক কালের কেউ কেউ মনে করেন, ইলুমিনাতির পুরো বিষয়টি একটি কল্পনা মাত্র। বাস্তবে এর যেহেতু কোন প্রমাণ নেই, সেহেতু বিশ্বের রাঘব বোয়ালদের সাথে এর যোগসাজসের কোন প্রশ্নও আসতে পারে না। কিন্তু প্রত্যক্ষ যোগসাজসের প্রমাণ পাওয়া না গেলেও, বিশ্ব পরিচালনায় খেলার মাঠে, সংগীত জগতে আর রুপালী পর্দায় যখন ঘুরে ফিরে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্নের ব্যবহার সচেতন মহল দেখতে পান। তখন বিশ্বের সকল ভূরাজনৈতিক কার্যক্রম ইলুমিনাতিরা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা, প্রশ্নটি রেখে গেলাম তাদের কাছেই।
মো. মহিউদ্দিন