ছবি: সংগৃহীত
ঋণ একটি গুরুতর বিষয় যা মানুষের জীবনে নানা ধরনের চাপ এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামিক হাদিসগুলোতে ঋণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং আশ্রয় প্রার্থনার গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী (সা.) নিজেও ঋণ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এবং তাঁর অনুসরণে মুসলিমদের জন্য বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, মহানবী (সা.) নামাজের পরে এই দোয়া করতেন—হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। একদিন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ঋণ থেকে বেশি আশ্রয় চান কেন? রাসুল (সা.) বললেন, “মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে।” (বুখারি, হাদিস: ২,৩৯৭)
আরেকটি দোয়া যা হাদিসে বর্ণিত, তা হলো: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-আজজী ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা, ঋণের ভার এবং মানুষের দমনপীড়ন থেকে আশ্রয় চাই। (বুখারি, হাদিস: ২,৮৯৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও একটি দোয়া করতেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মাছামি, ওয়াল মাগরামি।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারি, হাদিস: ৬,০০৭)
বিশ্বাসী মানুষের জন্য ঋণের বোঝা অত্যন্ত ভারি। কেননা, ঋণ মানুষের হক এবং ক্ষমা না পেলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই, যারা ঋণ মাফ করে, তাদের জন্য আখিরাতে বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিয়া আল-মাখযুমি (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) হুনাইন যুদ্ধের সময় তাঁর কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবী (সা.) যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ঋণ পরিশোধ করেন এবং তাঁকে দোয়া করে বলেন, “আল্লাহ তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয় ঋণের প্রতিদান হলো তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা।” (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)
এছাড়া, একবার একটি লোক ঋণ পরিশোধের জন্য হজরত আলী (রা.)–এর কাছে সাহায্য চাইলেন। আলী (রা.) তাকে রাসুল (সা.)-এর শেখানো একটি দোয়া শিখিয়ে দেন: ‘আল্লাহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমার জন্য হারামের পরিবর্তে আপনার হালাল রুজি যথেষ্ট করে দিন এবং আমাকে আপনার অনুগ্রহ দিয়ে সচ্ছলতা দান করুন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১,৩২১)
এই দোয়াগুলো ঋণ মুক্তির পথ হিসেবে মুসলিমদের জন্য এক গভীর শিক্ষা ও নির্দেশনা প্রদান করে।
নাহিদা