ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

সচেতনতার অভাবে এই হারাম খাবারগুলো খাচ্ছেন না তো!

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

সচেতনতার অভাবে এই হারাম খাবারগুলো খাচ্ছেন না তো!

ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল বা বৈধ খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে বলা হয়েছে, হালাল খাবার গ্রহণ দোয়া কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। কোরআন এবং হাদিসে বারবার হারাম খাবার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।" (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে, তার চুল এলোমেলো, শরীর ধুলাবালিতে ভরা, এবং সে হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, 'হে প্রভু, হে প্রভু।' অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারা তার শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৮৬)

অস্বাস্থ্যকর ও অপবিত্র খাবার খাওয়া যেমন হারাম, তেমনি ইসলাম পবিত্র, স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী খাবার গ্রহণে উৎসাহ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, "বলুন, যা কিছু ওহির মাধ্যমে আমার কাছে এসেছে, আমি আহারকারীর জন্য মৃতপ্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, শুকরের মাংস ছাড়া কোনো হারাম জিনিস পাইনি।" (সূরা আনআম, আয়াত: ১৪৫)

পশু-পাখি থেকে যেসব খাবার হারাম
১. দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু: বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, বানর ইত্যাদি।
২. নখধারী হিংস্র পাখি: ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা। রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁত এবং নখ দিয়ে শিকার করে এমন জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস: ১৯৩৪)
৩. নির্দিষ্ট প্রাণী: গৃহপালিত গাধা, শূকর ইত্যাদি।
৪. নোংরা ও নাপাক প্রাণী: মৃত জন্তু, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত।
৫. শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণী: ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক ইত্যাদি।

উদ্ভিদজাত খাবারের ক্ষেত্রে হারাম
খাদ্য ও পানীয় মূলত বৈধ, তবে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য যেমন গাঁজা, আফিম, ইয়াবা, মদ, সিগারেট ইত্যাদি হারাম। এছাড়া যে খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, সেগুলোও হারাম।

ইসলামে কিছু খাবার হারাম বলে নির্ধারিত আছে, যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা উল্লেখ করা হলো:

জেলাটিন: এটি সাধারণত শূকরের হাড় বা চামড়া থেকে তৈরি হয়। তাই উৎস নিশ্চিত না হলে এটি হারাম হতে পারে।
লিকার মিষ্টি বা কেক: এতে অ্যালকোহল থাকতে পারে যা হারাম।
চাইনিজ খাবারে ব্যবহৃত রাইস ওয়াইন বা সয়া সস: এতে অ্যালকোহলের উপস্থিতি থাকতে পারে।
হারাম এনজাইম থেকে তৈরি চিজ: অনেকে জানে না যে চিজ তৈরিতে ব্যবহৃত রেনেট শূকরের উৎস থেকে আসতে পারে।
বাইরের প্যাকেটজাত চিপস বা স্ন্যাকস: অনেক সময় এতে হারাম ফ্লেভারিং এজেন্ট বা অ্যালকোহল বেসড উপাদান থাকে।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই: যদি এটি হারাম তেলে ভাজা হয় (যেমন, শূকরের চর্বি)।
মার্শমেলো: সাধারণত এতে শূকরের জেলাটিন থাকে।
হট ডগ বা সসেজ: উৎস নিশ্চিত না হলে এগুলো হারাম হতে পারে।
কফি বা ডেজার্টে ব্যবহৃত অ্যালকোহল বেসড ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট: এটি প্রক্রিয়াজাত করার সময় অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়।
সী-ফুড: ইসলামের বিভিন্ন মাজহাবে শেলফিশ বা স্কুইড হারাম হিসেবে বিবেচিত।
জুস বা পানীয়তে অ্যালকোহল: অনেক সময় জুস বা সফট ড্রিঙ্কে সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল মেশানো থাকে।
ক্যান্ডি বা চুইংগাম: যদি এতে হারাম উপাদান যেমন পিগ ফ্যাট বা অ্যালকোহল থাকে।
বারবিকিউ সস বা গ্রিল সস: এতে হারাম মদ্যপ পানীয় বা উপাদান থাকতে পারে।

হারাম খাবার কখন বৈধ
কঠিন খাদ্য সংকটে পড়ে কেউ যদি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তবে বেঁচে থাকার জন্য সামান্য পরিমাণ হারাম খাবার খাওয়া জায়েজ। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে পাপের দিকে ঝোঁকানো নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, "যে বাধ্য হয়, কিন্তু সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তার কোনো পাপ নেই।" (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা মানুষের মঙ্গলার্থেই। আল্লাহ আমাদের তা বুঝার ও পালন করার তৌফিক দিন।

নাহিদা

×