ছবি: প্রতীকী
ইসলামে খিজির (আ.)-কে নিয়ে নানা রহস্যময় কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, তিনি আবে হায়াত পান করেছিলেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন।
অনেকে মনে করেন, তিনি এখনো হজযাত্রীদের পানি পান করান এবং মেহমানদারি করেন। তবে এসব বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আলেমরা। কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এসব প্রচলিত ধারণার ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সূরা কাহাফের ৬০ থেকে ৮২ নম্বর আয়াতে মুসা (আ.)-এর সঙ্গে একজন বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে তার নাম উল্লেখ করা না হলেও হাদিসে তাকে খাদির নামে অভিহিত করা হয়েছে।
নবী মুহাম্মদ (সা.) -এর একটি হাদিস থেকে জানা যায়, খাদির এমন একটি শুষ্ক জায়গায় বসেছিলেন, যা তার উঠে যাওয়ার পর সবুজ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তার নাম খাদির রাখা হয়।
খিজির (আ.) নবী ছিলেন কি না, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেম মনে করেন, তিনি নবী ছিলেন, কারণ তাকে ইলমে লাদুন্নি বা বিশেষ জ্ঞান ওহীর মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু আলেমের মতে, নবী না হয়েও কেউ বিশেষ জ্ঞান লাভ করতে পারেন। তাই তাকে নিশ্চিতভাবে নবী বলা কঠিন।
মুসা (আ.) একবার জানতে পারেন, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে তার চেয়ে বেশি জ্ঞানী একজন আছেন। আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আ.) তাকে খুঁজে বের করেন। সেই ব্যক্তি ছিলেন খিজির (আ.)। কুরআনে বর্ণিত তিনটি ঘটনায় দেখা যায়, খিজির (আ.)-এর কাজগুলো মুসা (আ.)-এর কাছে প্রথমে অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তবে প্রতিটি ঘটনার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি তার কর্মকাণ্ডের কারণ বুঝিয়ে দেন।
কিছু মতানুসারে, খিজির (আ.) এখনো জীবিত আছেন। তবে আলেমরা এই মতামতকে ভিত্তিহীন বলে মনে করেন। কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পৃথিবীতে কেউ চিরজীবী নয়। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, তার যুগের কেউ একশো বছর পর জীবিত থাকবে না।
প্রখ্যাত আলেম ইবনে কাসির ও ইমাম বুখারী বলেছেন, খিজির (আ.) এবং ইলিয়াস (আ.)-এর দীর্ঘজীবন ধারণা কুরআনের বাণীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
কিছু লোকের দাবি, খিজির (আ.) বাদশাহ জুলকারনাইনের আত্মীয় এবং আবে হায়াত পান করেছেন। তবে সুরা কাহাফে তাদের ঘটনা পৃথকভাবে বর্ণিত হয়েছে। কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল ছাড়া এসব মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়।
খিজির (আ.) সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রচলিত গল্পের সত্যতা যাচাই করতে কুরআন ও সহিহ হাদিসের ওপর নির্ভর করা জরুরি। ভিত্তিহীন কাহিনি পরিহার করে ইসলামের নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করা উচিত।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/4uKDq7VFYyg?si=545YvtQJOZW4CfQL
এম.কে.