ছবি : সংগৃহীত
ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলেন কট্টর ইসলাম বিরোধী, কাফেরদের হয়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে মুসলিম বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলেন অনেকবার। পরে ইসলামের ছায়াতলে এসে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মুসলিম বাহিনীর। দেড় শতাধিক যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে পরাজিত হননি কোনটিতেই। বলছি নবীজির এক বীর সাহাবীর কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে যিনি কাফেরদের আতঙ্কের নাম ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাইফুল্লাহ উপাধি দিয়েছিলেন।
ইতিহাসের পাতায় একজন অপরাজিত সেনাপতির নাম হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, যার অর্থ আল্লাহর তরবারি। ইসলাম গ্রহণের পর মাত্র ১৪ বছর জীবিত ছিলেন তিনি। এবং এই অল্প সময়েই মুসলিম বাহিনীর হয়ে প্রায় ১৫০ টি ছোট বড় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন খালিদ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার নেতৃত্বে কোন যুদ্ধেই পরাজিত হয়নি মুসলিম বাহিনী। প্রতিটি যুদ্ধে তিনি তার কৌশল সাহস এবং উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছিলেন। তাকে সামরিক ইতিহাসে একজন অপ্রতিরোধ্য সেনাপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ তার রণকৌশল সবসময়ই শত্রুপক্ষকে হতবাক করে দিত এবং মুসলিম বাহিনীকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিত।
৫৯২ সালে মক্কার কুরাইশ বংশের বানু মাকজুম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন খালিদ। তার পরিবার ছিল আরবের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী। ছোটবেলা থেকেই খালিদ বলিষ্ঠ গড়ন, অসীম সাহস এবং সৌর্যে অনন্য ছিলেন। তিনি ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার চালানো এবং যুদ্ধকৌশলে অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের আগে খালিদ কুরাইশদের সেনাপতি হিসেবে উহুদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার কৌশল ও উপস্থিত বুদ্ধির ফলে মুসলিম বাহিনীকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছিল অনেকবার। দ্রুত সম্প্রসারণমান ইসলামী সাম্রাজ্য হযরত খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাতেই বিস্তৃত হয়।
ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর শাসনামলে মুসলমান ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে বিখ্যাত যে ইয়ারমুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ। তার অসীম সাহসিকতায় মুসলমানরা বিজয় লাভ করে। এই যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের ফলে সিরিয়ায় বাইজেন্টাইন শাসনের অবসান ঘটে। সামরিক ইতিহাসে এই যুদ্ধ অন্যতম ফলাফল নির্ধারণকারী যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়। মুতার যুদ্ধে তিনি এতটাই বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন যে তার হাতে নয়টি তরবারি ভেঙে যায়। এ প্রসঙ্গে বুখারীতে স্বয়ং খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, মুতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তলোয়ার ভেঙেছে। এরপর আমার একটি ইয়ামিনী তলোয়ার অবশিষ্ট ছিল।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর খালিদ খলিফা আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সেনাপতি হিসেবে ঋদ্দাহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বিদ্রোহী গোত্র এবং সঘোষিত নবীদের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী একের পর এক বিজয় লাভ করে। পারস্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ইসলামের ভূখণ্ডের সীমা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করেন খালিদ।
৬৪২ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার হিমসে মৃত্যুবরণ করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন আমার শরীরে এমন কোন স্থান নেই যেখানে অস্ত্রঘাতের দাগ নেই। কিন্তু আজ আমি সজ্জায় মৃত্যুবরণ করছি। এটি একজন সৈন্যের জন্য দুঃখজনক। তার মৃত্যুর পর সিরিয়ার হিমসে তাকে সমাহিত করা হয় এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
মো. মহিউদ্দিন