ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

দুনিয়ার লোভ-লালসা জাহান্নামের আলামত

প্রকাশিত: ০৩:২০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

দুনিয়ার লোভ-লালসা জাহান্নামের আলামত

ছবি : সংগৃহীত

দুনিয়ার লোভলালসা জাহান্নামের আলামত। লোভলালসা মানুষের অন্তরের এক মারাত্মক ব্যাধি। লোভ ধ্বংস ডেকে আনে সীমাহীন। লোভলালসার দরুণ মানুষের বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। পা পরিচালিত হয় দুর্নীতি ও পাপের পথে। লোভলালসা হচ্ছে মানব চরিত্রের সর্বাধিক ক্ষতিকর রিপু।

মানুষের মাঝে যখন তাকওয়া ও ইখলাসপূর্ণ ঈমানের স্বল্পতা দেখা দেয়, যখন সে পাপিষ্ঠ শয়তানের ওয়াছায় পরে, গা শূন্য হয়, তখনই জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ প্রবৃত্তির এই অদৃশ্য শক্তিশালী চাহিদার শিকার হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লালসা করো না।”- সূরা আন নিসা

পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বপ্রথম হত্যার ঘটনাও এই কুপ্রবৃত্তি অতিলিপ্সার কারণেই ঘটেছিল। পৃথিবীতে মানুষ যত অনাসৃষ্টি করছে, তার অধিকাংশই লোভের বশবর্তী হয়েই করছে। অতিলোভের কারণেই মানুষ আজ বিবেক বর্জিত কাজ করছে। নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর হচ্ছে। সুশিক্ষা ও সৎকর্মের বিস্তার রুদ্ধ হচ্ছে। মানুষ ধর্মকর্ম ভুলে নাফরমান হয়ে অশান্তি ও অস্বস্তিতে ভুগছে।

আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের জানিয়ে দেব যে, শয়তান কার কাছে অবতরণ করে তারা তো অবতরণ করে প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর কাছে।”-সূরা শুয়ারা 

এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, বেশিরভাগ সামাজিক অনাচারের পেছনে লোভলালসা ও কুপ্রবৃত্তির খারাপ প্রভাব রয়েছে। তাই পবিত্র কোরআন এমন ঘৃণ্য লোভলালসাকে হারাম ঘোষণা করে ইরশাদ হয়েছে, “তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত করো না, তার প্রতি যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। এর দ্বারা তাদের পরীক্ষা করার জন্য ,তোমার প্রতিপালকের প্রদত্ত জীবন উপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।”- সূরা ত্বহা 

এ বিষয়ে বিশ্বনবী এরশাদ করেন, তোমরা লোভলালসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা এই জিনিসই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে এবং পরস্পরকে রক্তপাত ঘটানোর ব্যাপারে উসকে দিয়েছে। লোভলালসার কারণেই তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করেছে। লোভলালসা মানব চরিত্র গঠন ও সংশোধনের পথে অন্তরায়, দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণার উপকরণ।

বিশ্বনবী বলেন, ঈমান ও লোভ এক অন্তরে একত্র হতে পারে না। এর কারণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট কেননা ঈমানের পরিণাম হচ্ছে ধৈর্য, সহনশীলতা ও অল্পে তুষ্ট থাকা। লোভলালসার পরিণাম অশান্তি, ধৈর্যহীনতা ও অস্বস্তিবোধ। (নাসাই ও তিরমিজি)

লোভলালসা একটি মারাত্মক ব্যাধি। পাপিষ্ঠ শয়তানি এই অবৈধ প্রবৃত্তিকে মনুষ্য চরিত্রে লালন করতে ওয়াছা দেয়। তাই মানুষের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞতাবসত এই প্রবৃত্তির দাসত্বে আত্মসমর্পণ করে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তুমি কি দেখনা তাকে যে তার কামনা বাসনাকে ইলাহ রূপে গ্রহণ করে, তবুও কি তুমি তার কর্মবিধায়ক হবে। তুমি কি মনে করো যে, এদের অধিকাংশ শুনে ও বোঝে। এরা তো পশুর মতোই বরং এরা অধিক পথভ্রষ্ট।”-সূরা ফুরকান 

মানুষের মাঝে যখন লোভলিপ্সা ভর করে, তখন সে বেসুমার নিয়ামতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বে ও হরহামেশা থাকে বেশকর অতীব যদি উপায়ে অর্থ উপার্জনের পরও মানুষের মনে তৃপ্তি না আসে তাহলে বুঝতে হবে, সে লোভলালসার বশীভূত হয়ে পড়েছে।

পবিত্র কোরআন বলছে, “একে অন্যের থেকে বেশি পাওয়ার লোভ বা প্রতিযোগিতা তোমাদের ভুলের মধ্যে ফেলে রেখেছে, এমনকি দুনিয়া পাওয়ার এ চিন্তা নিয়েই তোমরা কবরে বেঁচে যাও।”-সূরা তাকাসুর 

রাসূলুল্লাহ বলেন, যদি কোন মানুষের এক উপত্যকা ভরা স্বর্ণ থাকে, তবে সে তার জন্য দুটি উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। তার মুখ মাটি ছাড়া মৃত্যু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আর কিছুতেই ভরে না। আর যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। (সহিহ ও বুখারী)

অন্যত্র এরশাদ করেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছাগলের পালে ছেড়ে দিলে যে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, সম্মান, লিপ্সা ও সম্পদের লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য তার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। (তিরমিজি)

‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ এই বহুল প্রচলিত প্রবাদ সম্পর্কে আমরা সবাই সম্মুখ অবগত। মানব চরিত্রের রিপুগুলোর মধ্যে লোভলালসা সর্বাধিক ক্ষতিকর। লোভকে পাপের আধার বলা যেতে পারে কেননা লোভ মানুষকে পাপ কাজে নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। মানব জীবনে লোভের পরিণাম পাপ আর সেই পাপের পরিণতি ধ্বংস। আর এই পরিণতির কারণ হলো নীতি নৈতিকতা থেকে পদস্খলন, সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, উচ্চাবিলাস এবং উৎশৃঙ্খল বেপরোয়া জীবনযাপন।

আরেকটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, এখানে সতর্কতা স্বরূপ বলা যেতে পারে, বর্তমানে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উচ্চাবিলাসের শিকার হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অসংখ্য অধিবাসী একযোগে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিজ জীবন হুমকির মুখে ফেলছে, কখনো কখনো মৃত্যুর সম্মুখীনও হচ্ছে, আর এসবই হচ্ছে অতিলোভের কুফর।

মো. মহিউদ্দিন

×