ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

প্রতিদিন সকালে যে আমল করলে হাতেনাতে ফল পাবেন

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

প্রতিদিন সকালে যে আমল করলে হাতেনাতে ফল পাবেন

ছবি: সংগৃহীত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস তিনটি সুরা তিনবার করে পড়বে, তা তার সমস্ত দুনিয়াবী ও আখিরাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’’ হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসব সুরার অসীম বৈশিষ্ট্য এবং তাদের আমলের গুরুত্ব ও উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে, যা মানবজাতির কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।

সুরা ইখলাস

সুরা ইখলাস আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর অনন্য সত্ত্বার বিশিষ্ট বর্ণনা প্রদানকারী একটি ছোট্ট, অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরা। এটি কুরআনের ১১২ তম সুরা। সুরাটির তেলাওয়াত ও আমল মুসলমানদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং এটি আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠার এক অনন্য মাধ্যম।

উচ্চারণ:
কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থ:
(হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা ইখলাস)

সুরা ফালাক

সুরা ফালাক মানুষের জন্য শয়তান, জাদু এবং অন্যান্য অনিষ্টের বিরুদ্ধে আশ্রয় লাভের একটি বিশেষ আমল। এটি নিয়মিত পড়লে সমস্ত অপকারী শক্তি থেকে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।

উচ্চারণ:

কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব; মিন শাররি মা খালাক্ব; ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব; ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ; ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে। অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সুরা নাস

এই সুরা মানুষের অন্তর ও বাহ্যিক বিপদের থেকে নিরাপত্তা লাভের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এর প্রথম তিন আয়াত আল্লাহর প্রশংসা এবং পরের তিন আয়াতে শয়তান ও জ্বিনের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

উচ্চারণ:
কুল আউজু বিরাব্বিন নাস; মালিকিন্ নাস; ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ওয়াসিল খান্নাস; আল্লাজি ইউওয়াসয়িসু ফি ছুদুরিন নাস। মিনাল ঝিন্নাতি ওয়ান নাস। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

সুরা তিনটির বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা

  • হাদিসের বর্ণনায় রয়েছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন তাঁর উভয় হাত একত্রে মিলিয়ে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পাঠ করতেন, তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি তিনবার এ কাজ করতেন।’’ (বুখারি)

  • তিরমিজির এক হাদিস মতে, ‘‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনটি সুরা পড়ে, সে সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’’

  • আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, ‘‘ফজর ও মাগরিবের ফরজ নামাজের পর প্রতিটি সুরা তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্য ফরজ সালাতে একবার করে এই তিনটি সুরা পড়া সুন্নত।’’

  • হজরত উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমরা জানো কি, আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে, তার মতো কোনো আয়াত পূর্বে নাজিল হয়নি। তা হলো- কুল আউজু বিরাব্বil ফালাক এবং কুল আউজু বিরাব্বিন নাস।’’ (মুসলিম)

এই তিনটি সুরা নিয়মিত পড়লে আল্লাহর সাহায্য ও নিরাপত্তা পাওয়া যায় এবং এগুলো মানুষের জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা আনে।

নুসরাত

×