ইসলামের ইতিহাসে সালমান আল-ফারসি (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি কেবল একটি ধর্মীয় পরিবর্তন নয়, বরং এটি সত্যের সন্ধানে এক অসামান্য ও চিত্তাকর্ষক যাত্রার প্রতীক। পারস্যে অগ্নিপূজক পরিবারে জন্ম নেওয়া সালমান (রা.) এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তার অদম্য অনুসন্ধিৎসু মানসিকতার ছাপ রয়েছে। তার এই পথচলা ইতিহাসে এক অসাধারণ দৃষ্টান্তের উদাহরণ।।
সালমান (রা.) ইরানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল পারস্যের অগ্নিপূজার অনুগত অনুসারী। ছোটবেলা থেকেই সালমান (রা.) ধর্মীয় আচার-আচরণে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তিনি তৃপ্ত হননি, যেন তিনি সত্যের আলো খুঁজে ফিরছিলেন। একদিন তিনি খ্রিস্টানদের প্রার্থনা দেখতে পান এবং তাদের উপাসনার পদ্ধতিতে মুগ্ধ হন। এটাই ছিল তার সত্যের সন্ধানের প্রথম ধাপ।
খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপাসনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি পারস্য ত্যাগ করেন এবং সিরিয়ায় একজন বিশপের অধীনে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি এক খ্রিস্টান পাদ্রির থেকে ভবিষ্যদ্বাণী শুনেন যে, আরবে শেষ নবী আসবেন, যিনি সত্য ধর্ম প্রচার করবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী সালমানের মনে এক নতুন আলোর সঞ্চার করে।
সত্যের সন্ধানে সালমান (রা.) আরবের পথে পা বাড়ান। কিন্তু যাত্রাপথে তিনি প্রতারিত হন এবং দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে মদিনায় এসে পৌঁছান। যদিও তিনি দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিলেন, তার হৃদয় ছিল স্বাধীন এবং সত্যের প্রতি নিবেদিত। মদিনায় তিনি শুনতে পান এক নবীর আগমনের কথা, যিনি শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)।
সালমান (রা.) নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার হাতে থাকা নবুওতের মোহর পরীক্ষা করেন। এ মুহূর্তে তার পূর্বে শোনা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বাস্তবে পরিণত হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবী (সা.) এর উম্মাহর অংশ হয়ে ওঠেন। নবী করিম (সা.) নিজে তার দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন।
ইসলামে প্রবেশের পর সালমান (রা.) তার অসাধারণ জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ে অবদান রাখেন। খন্দক যুদ্ধের সময় তার কৌশলগত পরামর্শে মদিনার চারপাশে খন্দক খনন করা হয়, যা মুসলমানদের বিজয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সালমান আল-ফারসি (রা.) এর জীবন আমাদের শেখায় যে, সত্যের প্রতি নিবেদন এবং অধ্যবসায় কখনও ব্যর্থ হয় না। তার এই মহাকাব্যিক যাত্রা আমাদের দেখায় যে,সত্যের জন্য যারা অক্লান্ত চেষ্টা চালায়, তারা একদিন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। সালমান (রা.) এর জীবন আজও লাখো মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
আফরোজা