ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

হাদিসে বর্ণিত কবিরা গুনাহ: ইসলামের দৃষ্টিতে বড় পাপসমূহ

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

হাদিসে বর্ণিত কবিরা গুনাহ: ইসলামের দৃষ্টিতে বড় পাপসমূহ

ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) এমন কিছু কাজ বা আচরণ যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এইগুলো এমন গুরুতর যে এগুলো থেকে ক্ষমা পেতে তাওবা ও আল্লাহর কাছে আন্তরিক প্রার্থনা অপরিহার্য। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে এসব পাপের উল্লেখ রয়েছে।

কবিরা গুনাহ কী?
কবিরা গুনাহ হলো এমন পাপ, যা আল্লাহ স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছেন এবং যার জন্য কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এই পাপগুলো সরাসরি মানুষের ঈমান ও নৈতিক চরিত্রে প্রভাব ফেলে।

হাদিসে বর্ণিত প্রধান কবিরা গুনাহসমূহ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে কবিরা গুনাহের তালিকা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:

১। শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদার করা):

শিরক ইসলামে সবচেয়ে বড় পাপ।
আল্লাহ বলেছেন, শিরক ক্ষমার অযোগ্য যদি কেউ তাওবা না করে। (সূরা নিসা: ৪৮)

২। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "মিথ্যা সাক্ষ্য শিরকের সমান গুরুতর।" (বুখারি ও মুসলিম)
নির্দোষ মানুষ হত্যা:

কুরআনে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল।" (সূরা মায়িদা: ৩২)

৩। জাদু চর্চা:
জাদু বা কালো জাদু করা ও তার ওপর বিশ্বাস করা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

৪। মাতা-পিতার অবাধ্যতা:
হাদিসে এসেছে, "মাতা-পিতার অবাধ্যতা কবিরা গুনাহের মধ্যে অন্যতম।" (বুখারি)
যিনা বা ব্যভিচার:

ইসলামে ব্যভিচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কুরআনে এ সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে, "ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, এটি একটি জঘন্য কাজ।" (সূরা ইসরা: ৩২)

৫। মদ্যপান:
মদ্যপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ কবিরা গুনাহের মধ্যে পড়ে।
সুদ গ্রহণ ও প্রদান:

কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, "যারা সুদ খায়, তারা শয়তান দ্বারা স্পর্শকৃত অবস্থায় দাঁড়াবে।" (সূরা বাকারা: ২৭৫)

৬। পরনিন্দা ও অপবাদ:
অন্যের সম্মানহানি করা বা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কবিরা গুনাহ।

৭। আমানতের খেয়ানত:
আমানতের খেয়ানত বা প্রতারণা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়:
তাওবা ও ইস্তিগফার: আন্তরিকভাবে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

সৎ কাজ করা: পাপের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিয়মিত নামাজ, রোজা, দান ইত্যাদি সৎ কাজ করা।

আল্লাহর আনুগত্য: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) নির্দেশ মেনে চলা।

সৎ সঙ্গ নির্বাচন: ভালো ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থাকা।


ইসলামের দৃষ্টিতে কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা ঈমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ গুনাহগুলো মানুষের আত্মিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আল্লাহর রহমত পেতে হলে এসব পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং আন্তরিক তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি।

শিলা ইসলাম

×