শুধু ইবাদত পালনের জন্য নয়,বরং নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভের জন্যও মুসলমানদের নামাজ আদায় করা উচিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। চলুন জেনে নিই নিয়মিত নামাজ আদায় করলে কি কি উপকার হয় ।
মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কোলেস্টেরল বা চর্বি দ্বারা শিরা উপশিরাগুলো সংকুচিত হতে থাকে। ফলে দেখা দেয় অসংখ্য রোগব্যাধী।যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ,অকালে বুড়িয়ে যাওয়া,ক্ষুধামন্দা অন্যতম।এই কোলেস্টেরল রোধ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো ব্যায়াম,যা নামাজ আদায় করা হলে খুব ভালোভাবে পূরণ হয়ে যায়।
হাদিসে আছে,‘নিশ্চই নামাজে শেফা ও আরোগ্য আছে’-ইবনে মাজাহ,বাাবুস সালাতিস শেফা,৪/৯৮,হাদীস ৩৪৫৮।
পাকিস্তানের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড:মোহাম্মদ আলমগীর এই হাদীসের সত্যতা প্রমাণের জন্য একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন।একজন নামাজীর শরীরে নামাজরত অবস্থায়ই তারা ইলেকট্রনিক রেডিওলোজীর মাধ্যমে পরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান তাকবীরে উলা অর্থাৎ নিয়ত বাঁধার জন্য যখন হাত কনুই ভেঙ্গে কাঁধ বরাবর উঠানো হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
কিয়াম অর্থাৎ,দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বেঁধে রাখার সময় কনুই থেকে কব্জি ও অঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হাত ব্যবহৃত হয়,এতেও রক্তের চলাচল তীব্র হয়।
এরপর রুকু।রুকুর সময় হাঁটু,কনুই,কব্জি এবং কোমড়ের সবগুলো জয়েন্ট প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয়,এতে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়।
সেজদাতে হাত,পা,পেট,পিঠ,কোমড়,উরু ও শরীরের সবগুলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জোড়ায় নাড়া পড়ে এবং টানাটান থাকে।এমতাবস্থায় রক্ত মস্তিষ্ক পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়।তাশাহুদের বৈঠকের সময় কোমড় থেকে পা পর্যন্ত রগগুলি টানটান হয়ে থাকে,এতে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
সবশেষে সালাম। সালাম ফেরানোর সময় গর্দানের দুইদিকের জোড়াগুলোই কাজ করে এবং গর্দান ঘোরানোর সময় রক্তসঞ্চালন তীব্র হয়।
পাকিস্তানের আরেক চিকিৎসক ডা: মাজেদ জামান উসমানী ফিজিওথেরাপীতে উচ্চ ডিগ্রী নেয়ার জন্য ইউরোপে গিয়েছিলেন।সেখানকার বিশেষজ্ঞরা তাকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন,নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে বড় বড় রোগগুলিও ভালো করা সম্ভব।যেমন-মেন্টাল ডিজিস বা মস্তিষ্কের রোগ,স্নায়বিক রোগ,অস্থিরতা ও অবসাদজনিত রোগ,হৃদরোগ,আর্থ্রাইটিস,ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ,পাকস্থলির ক্যানসার,ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
নামাজের প্রতিটা ধাপে ধাপে রক্তের এমন সঞ্চালন আর শারীরিক অনুশীলন দেখে অবাক পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা।যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ধ্বনিতত্ত্ববিদ হার্ডি উইলিয়াম লেট বিটার বলেছেন,নামাজের মধ্যে ইমাম যখন কোরআন তিলাওয়াত করেন,তখন নামাজীরা তা গভীর মনোযোগের সাথে শ্রবণ করে। এই তিলাওয়াত এবং শ্রবণের মাঝে একটি তীব্র আলোকরশ্মি তৈরী হয়। আলোর পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুটি দিক থাকে। কোরআনের প্রতিটি শব্দই পজিটিভ।নামাজী ব্যাক্তির উপর যখন সেই শব্দের প্রভাব পড়ে তখন তাদের বহু রোগ ভালো হয়ে যায়।
শুধু শারীরিক উপকারিতাই নয়,নামাজে রয়েছে মানসিক উপকারিতাও। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম ক্রুকস তার জনপ্রিয় বই “Research in the Phenomena of Spiritualism" বইয়ে লিখেছেন-লোভ,লালসা,কৃপণতা,হিংসা,ঘৃণা,প্রতিশোধ গ্রহণ এরকম ঘৃণ্য অভ্যাসের কারণে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ যদি নামাজ আদায় করতে শুরু করে তাহলে শীঘ্রই এসব রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।
নামাজ এমন একটি ইবাদত, যাতে রয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ শারীরিক অনুশীলন।নামাজে হাত তোলা,হাত বাঁধা,নিচের দিকে চোখ রাখা আবার হাত ছেড়ে দেয়া,ঝুঁকে যাওয়া,মন মস্তিষ্ককে কেন্দ্রীভূত রাখা,হাঁটু গেড়ে বসা সবকিছুই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ব্যায়ামের পদ্ধতি।
আফরোজা